আতিউর রহমান ও ভারতীয় নাগরিকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌরভ নূর , বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
আতিউর রহমান ও ভারতীয় নাগরিকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের আর্থিক স্ক্যাম ঘটেছে, যা এখনও দেশের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ২০১৬ সালে ঘটেছিল, এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি ছিলেন সেই প্রধান ব্যক্তি যিনি এই রিজার্ভ চুরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে কাজ করেছেন। 


এখন পর্যন্ত যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এ ঘটনায় ভারতীয় নাগরিকদেরও ভূমিকা ছিল। একটি উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনা অনুসারে, আতিউর রহমান ও তার সহযোগীরা আরটিজিএস সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করার পেছনে ছিল। ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নানকে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসেন আতিউর, যিনি সুইফটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে হ্যাকিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। 


এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা আতিউরের সঙ্গে যোগসাজশে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলার কাজ করেছেন। হ্যাকিংয়ের পর, রাকেশ আস্তানা নামে এক ভারতীয় নাগরিকের মাধ্যমে আলামত ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরণের অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও সহযোগিতা করেননি। 


যেহেতু বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি হওয়ার পর, এটি একটি আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়, এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও এ ঘটনার তদন্ত করেছিল। তবে, আতিউর রহমান এবং তার সহযোগীদের ওপর রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে এই ঘটনার তদন্ত সঠিকভাবে না হয়। 


এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য নয়, দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


সূত্রমতে, আতিউর রহমানের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা আরটিজিএস এবং সুইফটের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে একটি বড় দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এই সিন্ডিকেটটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের সঙ্গে কাজ করে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করে। এ ঘটনার পর, সিআইডি এবং দুদক সহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা সক্রিয়ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। 


এদিকে, ফরাসউদ্দিন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এবং সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষা চুরির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, কিন্তু সবগুলো তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে যে, ১২-১৩ জন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, এবং তদন্ত আরও বিস্তৃত হতে পারে। 


এছাড়া, অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তারা তদন্তকে প্রভাবিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা তদন্তের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে পুলিশ, সিআইডি, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাজ করছে, যাতে এই ঘটনাটি ধামাচাপা রাখা যায়। 


এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর, সিআইডি এবং দুদক একসঙ্গে কাজ করছে, যাতে রিজার্ভ চুরি এবং এর সাথে জড়িত সমস্ত চক্র শনাক্ত করা যায়। এই তদন্তে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসতে পারে। 


এ ঘটনার পর, সরকার একটি বড় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছিল, এবং দেশের রিজার্ভ বর্তমানে অনেকটা কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে এই বিখ্যাত চুরি নিয়ে ।