শেরপুরে আকস্মিক বন্যা: ৪ জনের মৃত্যু, ১.৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি-শেরপুর
প্রকাশিত: শনিবার ৫ই অক্টোবর ২০২৪ ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
শেরপুরে আকস্মিক বন্যা: ৪ জনের মৃত্যু, ১.৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী

টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা, শ্রীবরদী ও শেরপুর সদরের অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে রয়েছেন।


নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছে ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগম। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন একজন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে, কিন্তু প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ছয়টি টিম ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ করছে।


শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, চেল্লাখালী নদীর পানি বর্তমানে পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না। মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অনেক মানুষ ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায় আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা বিএনপি সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেলও ত্রাণ বিতরণ করেছেন।


নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী ও নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য কাঁচা ও পাকা সড়ক, পুকুরের মাছ এবং গবাদি পশু।


জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ৮শ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৯০০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।


বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জরুরি ত্রাণ ও আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে।