কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর যুবদলের সাবেক নেতা রফিকুল ইসলামের একটি উসকানিমূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মিরপুর উপজেলার নিমতলা বাজারে যুবদলের একটি অফিস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের রাস্তায় দেখামাত্র পিটিয়ে মারার নির্দেশনা দেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাদেরকে ‘জঘন্য’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, "যদি কখনো কোনো আওয়ামী লীগকে দেখেন, রাস্তায় পিটিয়ে মারবেন। ওরা আমাদের রাস্তায় বের হতে দেয়নি। এমনকি বাজার পর্যন্ত করতে দেয়নি। এত জঘন্য তারা। ওরা যে রাজনীতি করে, তা সবচেয়ে জঘন্য।"
প্রায় এক মিনিট দুই সেকেন্ডের এই ভিডিওতে রফিকুল আরও অভিযোগ করেন যে, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। তিনি বলেন, "বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের তিনজন একসঙ্গে বসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের নামে গায়েবি মামলাসহ নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক কষ্ট করেছি। তাই আপনাদের অনুরোধ করব, দলের ভেতরে কোনো গ্রুপিং করবেন না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করবেন।"
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতার জন্ম দিতে পারে।
রফিকুল ইসলামের এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ওইটা রাজনৈতিক বক্তব্য। ৫ আগস্টের পর আমরাই আওয়ামী নেতাদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছি। কোনো অন্যায় না করেও শুধু মিরপুর বিএনপির নেতা রব্বানের ভাগনে হওয়ায় কারণে ১৬ বছর ধরে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই কষ্টের আবেগে কথাটা বলেছি। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।"
মিরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান, যিনি রফিকুল ইসলামের চাচা, বলেন, "এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। এটা আমাদের দলের আদর্শ না। আমরাও যদি আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসী আচরণ করি, সেটা তো জনগণ আশা করে না। এ জন্য হাজারো মানুষ জীবন দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেননি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের কড়া নির্দেশ সন্ত্রাস করা যাবে না। এই বক্তব্যের দায় দল নেবে না।"
এর আগে, গত ৭ আগস্ট কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় এক শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন কুষ্টিয়া যুবদলের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল মাজেদ। তিনি তার বক্তব্যে দাবি করেছিলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় যে ভাঙচুর করা হয়েছে, তাতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে স্থানীয়ভাবে সহিংসতার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।