ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী তীরবর্তী বেড়ি বাঁধটি বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবারই বিধ্বস্ত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিষখালী নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিদিন দু’বার জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় গ্রামের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। এরই মধ্যে বিভিন্নস্থানে নদী ভাঙন দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত তীরের বাসিন্দারা। সিসিব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা যায়, কাঁঠালিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কিছু অংশ চলতি বছরের শুরুতে মেরামত করা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট পানি বৃদ্ধি পায়।
এতে বিষখালী নদী তীরের অরক্ষিত বেড়িবাঁধের সাড়ে তিন কিলোমিটার ভেঙে ফসলি জমি ও বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ঝড়ের রাতে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও পানির তোড়ে ভেসে গেছে অনেকের বসতঘরে থাকা মালামাল।
উপজেলার আমুয়া, আউরা, জয়খালী, চিংড়াখালী, বড় কাঁঠালিয়া, আওরাবুনিয়া গ্রামের প্রায় দুইশত ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পানির তোড়ে গ্রামের কাঁচা পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে।
বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চরম আতংকে রয়েছে নদীর তীরবর্তী মানুষ। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বর্ষার আগে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বিষখালি ও সুগন্ধা নদীর ৪৮ কিমি বেড়িবাঁধের মধ্যে কাঁঠালিয়া উপজেলার ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের পুরোটাই নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিষখালী নদীর হাত থেকে কাঁঠালিয়া উপজেলাকে রক্ষা করতে হলে সিসিব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কাঁঠালিয়ার লঞ্চঘাট এলাকার শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, নতুন বেড়িবাঁধ করার পরে ভাবছিলাম এহন একটু শান্তিতে থাকতে পারমু। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে আবারো বেড়িবাঁধ ভাইঙ্গা গেছে। এহনও ঘরের মধ্যে পানি ঢোকে। জোয়ারের পানিতে তলাইয়া আছে মালামাল। কোথাও থাহার জায়গা নাই।
লঞ্চঘাট এলাকার রিকশাচালক আব্দুল আজিজ বলেন, ঘরের মধ্যে পানিতে থৈ থৈ করে। পানির মধ্যেই আমরা বসবাস করি। এহন পোলাপান লইয়্যা থাহার মতো কোন জায়গা নাই। বেড়িবাঁধটা ঠিক কইর্যা দেলে আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারমু।
গৃহকর্মী দুলি বেগম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের দিন বেড়িবাঁধের লগে আমাগো ঘরও ভাইঙ্গা গেছে। ঘর একটু ঠিকঠাক করছিলাম, কিন্তু বেড়িবাঁধ ভাইঙ্গা পানি এহনো ঘরের মধ্যে ঢোকে। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে কাঁঠালিয়া উপজেলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নতুন বেড়িবাঁধের সাড়ে তিন কিলোমিটার ভেঙে গেছে।
অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় এখনো জোয়ারের পানি ঢুকছে। বেশি পানি উঠলে উপজেলা পরিষদেও পানি ওঠে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে কাজ শুরু করা হবে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে পানি বেড়ে স্রোতে সাড়ে তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। প্রকল্প তৈরি করে বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।