নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারীসহ পাঁচ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
শনিবার বিকেলে নওগাঁর একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে কশব উচ্চবিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া কামরুজ্জামানের (তোতা) বাবা কায়েম উদ্দীন সংবাদ করে এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি কশব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিধি মোতাবেক সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা যাতে বিদ্যালয়ে নির্বিঘেœ গিয়ে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেন সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কশব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী সরদার ও কায়েম উদ্দীনের ছেলে কামারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কায়েম উদ্দীন বলেন, গত ২৬ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁর ছেলে কামারুজ্জামান কম্পিউটার অপারেটর পদে কশব উচ্চবিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। তার ছেলে ছাড়াও অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে বিধি মোতাবেক আরও চার কর্মচারী নিয়োগ দেয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। কশব উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুস ছালাম সরকারের ছেলে মহান আলী ও কশব সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আতাবর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় তারা নিয়োগ পাননি। আব্দুস ছালাম ও আতাবরের ছেলে নিয়োগ না পাওয়ায় তারা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী সরদার ও কায়েমের বড় ভাই খয়ের আলীকে কিছুদিন আগে মারপিট করেন। নিয়োগে আব্দুস ছালাম, আতাবর রহমান, আমিনুল ইসলামসহ প্রভাবশালী চক্রটি তাদের নিজ অপকর্ম হাছিল করতে না পারায় তার ছেলে কামরুজ্জামানসহ সদ্য নিয়োগ পাওয়া পাঁচ কর্মচারী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা ও ভয়-ভীতি প্রদশর্ন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে আব্দুস ছালাম ও তার লোকজন স্থানীয় পলাশবাড়ী বাজারে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এবং ভবিষ্যতে ওই বাজারে ব্যবসা করলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তাদের হুমকির মুখে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ৫ নভেম্বর আমি বাদী হয়ে মান্দা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। কিন্তু তারপরেও কোন ফল পাচ্ছি না। বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।
প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী সরদার বলেন, ‘বিধি মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পাঁচটি পদের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্য থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ বোর্ড পাঁচটি পদে পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। কারও নিয়োগ না পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার কিংবা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তো কোনো দায় নেই। অথচ স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোক আমাকে দায়ী করে আমাকে মারধর করেন। এটা নিয়ে মামলা হয়েছে। এখনও তারা আমাকে ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া পাঁচ কর্মচারীকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা ও হুমকি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুস ছালাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান অনিয়ম করে সম্প্রতি পাঁচ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে স্থানীয় উত্তেজিত লোকজন প্রধান শিক্ষককে গনধোলাই দেন। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া কায়েমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকির যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-এ আলম সিদ্দিকী বলেন, গত ২৬ আগস্ট কশব উচ্চবিদ্যালয়ে মারপিটের ঘটনায় একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া গত ৫ নভেম্বর কায়েম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি উপজেলার পলাশবাড়ী বাজারে তাঁর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও পরিবারের লোকজনের চলাফেরায় প্রতিপক্ষের লোকজন হুমকির বিষয়ে একটি জিডি করেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে সেখানে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার মতো আর কোনো ঘটনা ঘটবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।