দাফনের ৫৬ দিন পর করব থেকে স্কুলছাত্রের মরদেহ উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে জুলাই ২০২২ ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
দাফনের ৫৬ দিন পর করব থেকে স্কুলছাত্রের মরদেহ উত্তোলন

নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনকে দাফনের ৫৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। 


বুধবার (২৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পারিবারিক কবরস্থান এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসাইন, নওগাঁ সদর থানার ওসি ( অপারেশন) আব্দুল গফুর এবং সিফাতের পরিবারের লোকজনের উপস্থিতে লাশ তুলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।


উল্লেখ্য, গত ৩১ মে সকালে স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনকে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্মরণ শাহরিয়ার, হৃতিক ও রিয়াদ হোসেন মারধর করেন। ঘটনাটি সিফাত তার পরিবারকে জানালে ওই দিনই সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিষয়টিতে কর্ণপাত না করে উল্টো সিফাতকেও মারপিট করতে বলেন, নতুবা হাতে মেয়েদের চুরি পরে থাকতে বলেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী স্মরণ শাহরিয়ারের বাবা সাজেদুর রহমান শিক্ষার্থী সিফাতকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বিদ্যালয় হতে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।


এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবল চন্দ্র ও নজরুল ইসলামও সিফাতকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। ন্যায়বিচার না পাওয়ায় অত্যন্ত মনোকষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে ওই দিন রাতে গ্যাস বড়ি (কীটনাশক) খায় সিফাত। গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় প্রথমে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ১জুন দুপুরে তার মৃত্যু হয়।


ঘটনার পর নওগাঁর আমলী আদালত ১ এ গত ৯জুন মামলা গ্রহণের আর্জি দায়ের করেন নিহত সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান। পরে আদালতের নির্দেশে এ ঘটনায় দন্ড বিধির ৩০৬/৩৪ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তা করার অপরাধে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামসহ ৮জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিষয়টি এজহার হিসেবে গ্রহণ করে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশ। এই মামলার বাদী নিহতের বাবা মিজানুর রহমান।


মামলার বাদী সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, আমার ছেলেকে আত্মহত্যার প্ররোচনা করা হয়েছে। যার কারনে অপমান সইতে না পেরে আতœহত্যা করেছে। তাই আমার করা মামলায় আদালতের নির্দেশে ময়না তদন্তের জন্য ছেলের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আমি জড়িতদের কঠিন শাস্তি চাই।


এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) নজরুল ইসলাম জুয়েল মরদেহ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত সিফাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মরদেহ তুলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তার পর ময়না তদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।