ভূঞাপুরে গভীর রাত পর্যন্ত টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে কামারশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর- টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: বুধবার ৬ই জুলাই ২০২২ ০৬:২৭ অপরাহ্ন
ভূঞাপুরে গভীর রাত পর্যন্ত টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে কামারশালা

মাত্র কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। আর সে কারণেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বিভিন্ন এলাকার কামার বাড়ির কারিগররা । ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে ভূঞাপুরের বিভিন্ন  কামারশালা। 


ঈদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে কোরবানির পশু জবাইরের জন্য বড় ছুরি সহ চাপাতি , দা, চাকু , বঁটি তৈরি সহ পুরাতন লোহার সরঞ্জাম শান দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা । কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়লার চুলার আগুনে গরম লোহার  টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে উপজেলার কামারশালাগুলো।


সারা বছর তেমন একটা কাজ না থাকলেও প্রতি বছর এই সময় চাহিদা বেশি থাকায় কামাররা ব্যস্ত সময় কাটান। এক বছরে যে টাকা উপার্জন করেন তার কয়েকগুণ টাকা কোরবানির ঈদে আয় করেন কামারেরা।


সরে জমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উল আযহাকে ঘিরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এখানকার কামাররা । হাট বাজার ও অলিতে-গলিতে  তাদের হাতুড়ি ও হেমারের টুং  টাং চলচ্ছে অবিরত । কোরবানির পশু জবাইরের কাজে ব্যবহারের সরঞ্জাম তৈরি ও পুরাতন সরঞ্জাম শান দিতে কামারশালায় ভিড় করছেন মুসলমানরা।


অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের কামারের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় হাটগুলোতে প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় , বঁটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় , ছোট ছুড়ি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় , বড় ছুরি ৩০০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । এছাড়াও কোরবানি পশু জবাইরের প্রতিটি বড় ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। 


উপজেলার গোবিন্দাসী এলাকার সবুজ  কামার বলেন, সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানি ঈদ আসলে আমাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদ যত কাছে আসছে আমাদের কাজের চাপ তত বেড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টানা কাজ করে যাচ্ছি। সারা বছর যা উপার্জন না হয়, কোরবানি ঈদ আসলে তার চেয়ে বেশি উপার্জন হয়।


উপজেলার নিকরাইল হাটে চাপাতি কিনতে আসা খন্দকার রনি বলেন,লোহার তৈরি জিনিসের দাম এখন বেড়ে গেছে।একটি চাপাতি কিনতে আসছি।। কিন্তু দাম অনেক বেশি বলে কিনবো কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।


উপজেলার গোবিন্দাসী হাটে আসা ক্রেতা ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমি কোরবানির পশু জবাই করার ছুরি কিনতে এসেছি। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি। বড় ছুরির দাম চাচ্ছে ২ হাজার টাকা। এর আগে দাম ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। সেই সাথে দা, বঁটি, চাপাতি, ছোট ছুরি সহ সকল সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। 


টাঙ্গাইলের বৃহত্তম ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, নিকরাইল, শিয়ালকোলসহ বিভিন্ন হাটে আসা কামারের দোকানীরা বলেন, আগের চেয়ে সরঞ্জাম বানাতে লোহা সহ সকল কিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে একটা চাপাতি বানাতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হতো। এখন সেটা বানাতে খরচ হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। 


সকল কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় একটু বেশি দামে সরঞ্জাম গুলো বিক্রি করতে হচ্ছে। সকল কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার এখন আর আগের মতো লাভ হয় না। বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেশাটাকে ধরে রেখেছি।