বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব। গত ৬ মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ আর প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা থেরাপি দিলে তারাও সুস্থ হয়ে উঠছেন দ্রুত। কিন্তু এ প্লাজমা থেরাপির ধরণ ভিন্ন। ধরণ যেমনই হোক করোনায় আক্রান্ত রোগীকে প্লাজমা দান করা যেমন বৈধ তেমনি রয়েছে সাওয়াব।মহামারি করোনার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। সম্প্রতি বিশ্বের অনেক দেশে করোনা রোগীদের মাঝে 'প্লাজমা থেরাপি' প্রয়োগে সুফল পাওয়া গেছে।
প্লাজমা থেরাপি কী?
প্লাজমা থেরাপি বলা হয়, আল্লাহ তাআলার রহমতে কোনো ব্যক্তি ভাইরাসজনিত রোগ থেকে যখন সুস্থ হয়ে ওঠে, তখন সেই ব্যক্তির দেহে ওই রোগের একটা প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হয়। চিকিৎসকরা এই প্রতিরোধ শক্তিকেই বলেন 'অ্যান্টিবডি'।সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির শরীর থেকে রক্তের বিশেষ পদার্থ বা অংশ ‘প্লাজমা’ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করালে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা হলো, এতে অন্য রোগীও সুস্থ হয়ে যায়।সুস্থ হওয়া ব্যক্তির শরীরের 'অ্যান্টিবডি' রোগাক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করে। এটাকে চিকিৎসকরা প্লাজমা থেরাপি বলে থাকেন। সাধারণভাবে কিছু শর্তের সঙ্গে এই প্লাজমা থেরাপি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ।
ইসলামে প্লাজমা দেয়ার শর্ত
সাধারণভাবে জানা বিষয় যে, প্লাজমা দেয়া-নেয়া জায়েজ কি-না। 'হ্যাঁ', ইসলামিক স্কলারদের মতে প্লাজমা দেয়া বৈধ। প্লাজমা দান ও গ্রহণ করা রক্ত দেয়া-নেয়ার মতোই একটি বিষয়।ফোকাহায়েকেরাম রক্তদান করা এবং গ্রহণ করাকে অনেক আগেই বৈধতার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে সাধারণত রক্ত যেমন বেচা-কেনা করা অবৈধ, তেমনি প্লাজমাও বেচা-কেনা করাও অবৈধ।
অসুস্থ কোনো ব্যক্তি যদি রক্ত বা প্লাজমা এমনিতে না পায় বা তা সংগ্রহে অপারগ হয়, তবে ওই ব্যক্তি নিরূপায় হয়ে রক্ত বা প্লাজমা কেনা বৈধ হতে পারে কিন্তু তা কোনোভাবেই বিক্রয় করার সুযোগ নেই। তাই সাধারণভাবে প্লাজমা দান করা যাবে আর স্বেচ্ছায় দেয়া প্লাজমা গ্রহণও করা যাবে।তবে, প্লাজমা দান করার বিষয়টি অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের যথাযথ দিকনির্দেশনা ও অনুমোদন লাগবে।
সুতরাং করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার ব্যক্তির প্লাজমায় যদি অন্য রোগী সুস্থ হওয়ার সুযোগ কার্যকরী ও বেশি হয় তবে তাদের উচিত হবে অন্য রোগীকে প্লাজমা দান করা। আর প্লাজমা দানে যদি ওই ব্যক্তির ক্ষতি না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অন্য রোগীর জীবন বাঁচাতে প্লাজমা দিয়ে সহযোগিতা করলে মহান আল্লাহর কাছে পাবেন অনেক সাওয়াব।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ধনাঢ্য বা সাধারণ সচ্ছল ব্যক্তি যদি প্লাজমা দাতাকে কোনো উপহার বা হাদিয়া দিয়ে থাকেন সেটা ভিন্ন কথা। কোনো শর্ত, কোনো প্রত্যাশা কিংবা কোনো বিনিময়ের ব্যাপার যদি না থাকে, তবে প্লাজমা গ্রহীতার পক্ষ থেকে দেয়া এ উপঢৌকন বা হাদিয়া উপহারের মতো গণ্য হবে। এটা জায়েজ। এ জাতীয় উপহার বিনিময়ের আওতায় পড়বে না, বরং সৌজন্যমূলক উপহার বা উপঢৌকনের আওতায় পড়বে।আল্লাহ তাআলা করোনায় সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমে অন্য রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার এ ব্যবস্থাকে কল্যাণকর করে দিন। পুরো বিশ্বকে মহামারি করোনামুক্ত করে দিন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/ জি.হা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।