প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০২৫, ৯:২১

ইসলামে শুক্রবারকে বলা হয় ‘সপ্তাহের সেরা দিন’। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত, বরকত ও মাফের দরজা খুলে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবীতে নামানো হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম)। এই হাদিস থেকেই বোঝা যায়, শুক্রবার শুধু নামাজের দিন নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মিক পুনর্জাগরণের দিন।
শুক্রবার সকালে গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সুন্দর পোশাক পরা ও মসজিদে সময়ের আগে গিয়ে বসা—এসব আমল আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবার গোসল করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, প্রথম দিকের সময়ে জুমার নামাজে যায়, মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে এবং ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, তার এক শুক্রবার থেকে পরের শুক্রবার পর্যন্ত সমস্ত ছোটখাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি)।
এই দিনে আল্লাহর জিকির করা, দরুদ পাঠ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিশেষ করে সূরা কাহফ পাঠ করলে পরবর্তী এক সপ্তাহ আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিকে আলোকিত রাখেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবার সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই শুক্রবারের মাঝখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’ (আল-হাকিম)।
শুক্রবারে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত থাকে, যখন বান্দার দোয়া কবুল হয়। যদিও এর সঠিক সময় গোপন রাখা হয়েছে, তবে হাদিসে বলা হয়েছে, এটি আসরের পর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময় হতে পারে। তাই এ সময়ে মন থেকে দোয়া করা উচিত—আল্লাহ যেন আমাদের সকল দুঃখ দূর করে, জীবনে বরকত দান করেন।
এই দিনে আত্মীয়তা রক্ষা করা, গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা ইসলামি জীবনের অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন শুক্রবারের নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা বেচাকেনা বন্ধ করে নামাজের দিকে ধাবিত হও।’ (সূরা জুমা, আয়াত ৯)। এটি প্রমাণ করে, শুক্রবার শুধু ইবাদতের নয়, আত্মসমর্পণ ও ঐক্যের দিনও।

জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য সম্মিলিত ঐক্যের প্রতীক। এই নামাজের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষ আল্লাহর সামনে সমানভাবে দাঁড়ায়, কোনো শ্রেণিভেদ থাকে না। একত্রে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতা বৃদ্ধি পায়।
শুক্রবার হলো আত্মবিশুদ্ধি, আত্মজিজ্ঞাসা ও নতুনভাবে শুরু করার দিন। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই আজই আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে জুমার দিনের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দেন।
শেষে বলা যায়, শুক্রবার শুধু ইবাদতের দিন নয়, এটি আত্মার বিশ্রাম ও হৃদয়ের পুনর্জাগরণের দিন। তাই আজকের এই পবিত্র জুমায় সবাই যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, নিজেদের জীবনকে কুরআন ও হাদিসের আলোয় আলোকিত করার অঙ্গীকার করি।