প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কট এক গভীর বাস্তবতা। মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, আয়ের বৈষম্য ও দুর্নীতি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। মুসলিম সমাজও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক সঙ্কট শুধু হিসাবের ঘাটতি নয়, বরং নৈতিকতার অভাবও এর বড় কারণ।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, "যখনই কোনো শহরকে আমরা ধ্বংস করতে চাই, তখন সেখানে বিলাসিতায় লিপ্তদেরকে আদেশ করি, তারা সেখানে সীমালঙ্ঘন করে, ফলে তার উপর আমার কথা কার্যকর হয় এবং আমি তা ধ্বংস করে দিই" (সূরা আল-ইসরা: ১৬)। এ আয়াত প্রমাণ করে যে অন্যায় ও অপচয় অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে।
ইসলাম অর্থনীতিকে ন্যায় ও সমতার উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এজন্য যাকাত, সদকা, ফিতরা ও ইনফাকের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বন্টনকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ধনীদের সম্পদ গরিবের কাছে পৌঁছায় এবং সমাজে আর্থিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের সম্পদকে যাকাতের মাধ্যমে রক্ষা করো, রোগ দূর করো সদকার মাধ্যমে এবং দোয়া দিয়ে বিপদ মোকাবিলা করো" (বায়হাকি)। এই শিক্ষাই প্রমাণ করে যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যাকাত ও সদকা অপরিহার্য।
অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ইসলাম সুদ বা রিবা নিষিদ্ধ করেছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন haram" (সূরা আল-বাকারা: ২৭৫)। সুদভিত্তিক অর্থনীতি মানুষের সম্পদকে ধ্বংস করে এবং বৈষম্য বাড়ায়। তাই ইসলামী অর্থনীতি সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর জোর দেয়।
এছাড়া ইসলাম অপচয় ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই" (সূরা বনী ইসরাইল: ২৭)। যদি সমাজে মিতব্যয়িতা ও দায়িত্বশীল খরচ চালু হয়, তবে অনেক সঙ্কট সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের জন্য হালাল উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, "সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে" (তিরমিজি)। অর্থাৎ সৎ ব্যবসা সমাজ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
সবশেষে বলা যায়, অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ কেবল নীতি ও মূল্যবোধ নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলায় নিহিত। ইসলামের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে ন্যায়, সাম্য ও সহযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে উঠবে, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই কল্যাণ বয়ে আনবে।