সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন: স্যাবোটাজ বা দুর্ঘটনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৬শে ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১০ অপরাহ্ন
সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন: স্যাবোটাজ বা দুর্ঘটনা?

বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের দুই জায়গায় লাগা ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। এই ঘটনাটি দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্রে ঘটে থাকায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত, আগুনের কারণ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে, এবং তদন্তে এটি একটি স্যাবোটাজ বা নাশকতামূলক ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও, দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সবাই একযোগে প্রশ্ন তুলেছেন, সচিবালয়ের মতো নিরাপদ ও স্পর্শকাতর স্থানে এভাবে বড় একটি আগুন কীভাবে লেগে গেল? কপাল খারাপ না এটি ছিল পরিকল্পিত একটি ঘটনা?


ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, “সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগুন লাগানোর উদ্দেশ্যই ছিল সেখানে থাকা নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা। এরকম আগুন একসঙ্গে চারটি জায়গায় লাগা সম্ভব নয়, যদি না এটি কোনো নাশকতা হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিশ্চিত যে এটি একটি স্যাবোটাজ।’’


ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন যে, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে। তারা মনে করেন, আগুনের সূত্রপাত একটি জায়গা থেকে না হয়ে একাধিক জায়গায় হতে পারে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।


ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তা ঘাটতি


একই বক্তব্য তুলে ধরেছেন সাবেক ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান। তিনি বলেন, “এভাবে একাধিক জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা সহজভাবে ভাবার মতো নয়। এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। আগুনে যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নিশ্চিতভাবে নাশকতা বলে মনে হচ্ছে।’’


তিনি আরো বলেন, ‘‘ফায়ার স্টেশন সচিবালয়ের ভেতরেই ছিল। সেখানে দুই শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তবুও কেন এভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ল? বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা উচিত।’’


এই আগুনের সময় ভেতরের ফায়ার স্টেশন, ক্যামেরা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন যথাযথভাবে কাজ করেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যদি এটি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হতো, তবে তা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু এখানে একাধিক জায়গায় আগুন ধরার ঘটনায় সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।


সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ


আগুনের ঘটনায় সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তবে সমালোচনা উঠেছে যে, কমিটিতে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের যথাযথ অংশগ্রহণ ছিল না। সাবেক ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, “যেসব অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা আগুনের কারণ শনাক্ত করতে পারেন, তাদেরকে এই কমিটিতে রাখা উচিত ছিল। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এই তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে, যা যথেষ্ট নয়।”


এছাড়া, ঢাকার সঙ্গেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের নেতারা বলেছেন যে, এ ঘটনায় সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এক ধরনের ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে। এটি শুধু প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রেই নয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি করেছে।


ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা এবং সংশয়


ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক নাঈম শাহিদউল্লাহ আরও বলেন, “এ ধরনের গুরুতর ঘটনা যেখানে এত বড় অগ্নিকাণ্ড, সেখানে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সঠিক ছিল না। ফায়ার সার্ভিস সঠিক সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেনি। এতে করে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের দুর্বলতা প্রতিভাত হয়েছে।”


এছাড়া, ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচিবালয় একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা, যেখানে আগুন লাগার সম্ভাবনা তীব্র হলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে আগুন নেভানো অনেকটাই বিস্ময়কর।


তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ


এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক শাকিল নেওয়াজ বলেছেন, “এটি দুর্ঘটনা নাও হতে পারে। এটা হতে পারে পরিকল্পিত আগুন। আসলে একটি নাশকতার পরিকল্পনা হতে পারে, যার উদ্দেশ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা।” তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, এই ঘটনার তদন্তে সঠিকভাবে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।


তিনি বলেন, “এভাবে একাধিক স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল, এবং এটি একটি গভীর স্যাবোটাজ বা নাশকতা হতে পারে।”