তাওবার নামাজ সম্পর্কে কী বলেছেন বিশ্বনবি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ১৮ই অক্টোবর ২০২১ ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
তাওবার নামাজ সম্পর্কে কী বলেছেন বিশ্বনবি?

অন্যায়-অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ বা গুনাহ না করার দৃঢ় সঙ্কল্পই হলো তওবাহ। আর গুনাহের কাজ হয়ে গেলে তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনায় দুই রাকাত নফলকে বলা হয় তাওবার নামাজ। কিন্তু তাওবার নামাজ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন?


সালাতুত তাওবাহ বা তাওবার নামাজ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কোনো অন্যায় অপরাধ সংঘটিত হলে সে সময় তাওবাহ করার পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনায় ২ রাকাত নামাজ পড়াও কর্তব্য। হাদিসে এটিকে তাওবার নামাজ বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা কোনোরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। এরপর তিনি প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত তেলাওয়াত করেন-


وَ الَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَکَرُوا اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ ۪ وَ مَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰهُ ۪۟ وَ لَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ - اُولٰٓئِکَ جَزَآؤُهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ نِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِیۡنَ


‘যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা (অপরাধ) করে ফেলে, তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না। সেসব লোকের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা এবং জান্নাত; যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং (সৎ) কর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৫-৩৬)।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনআদে আহমাদ, ইবনে হাব্বান, ইবনে খুজাইমাহ, বায়হাকি)


অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে এরপর উঠে ২ রাকাত অথবা ৪ রাকাত ফরজ অথবা ফরজ নয় (এমন সুন্নত বা নফল) নামাজ উত্তমরূপে রুকু ও সেজদা করে পড়ে, এরপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তাবারানি, মুজাম)


এছাড়াও আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার কাছে তাওবাহ করতে একাধিক আয়াতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা ওঠে এসেছে এভাবে-


১. یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ ۚ نُوۡرُهُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ


‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবাহ কর বিশুদ্ধ তওবাহ। সম্ভবতঃতোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মুচে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিচে নদীমালা প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবি এবং তাঁর বিশ্বাসী দাসদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডান পাশে আলোকিত হবে। তারা বলবে-


رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ


উচ্চারণ : রাব্বানা আতমিম লানা নুরানা ওয়াগফিরলানা; ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’


অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন। আর আমাদেরকে ক্ষমা কর হবে। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’


২. وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیۡعًا اَیُّهَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ


‘তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর হে মোমিনগণ! যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার।’ (সুরা নূর : আয়াত ৩১)


আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তাওবার কথা উল্লেখ করেছেন। তাওবার গুরুত্ব এবং ফজিলতও বর্ণনা করেছেন। তাওবার ফলে অনেক নেয়ামত পাওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। যাতে মুমিন মুসলমান আল্লাহর কাছে তাওবাহর মাধ্যমে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করে।আর আল্লাহর কাছে তাওবাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে ২ রাকাত নামাজ পড়াই হলো তাওবার নামাজ। যা পড়লে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। এবং নেয়ামত হিসেবে জান্নাত দান করেন।


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, তাওবার সময় শুধু মৌখিক তাওবাহ করে থেমে থাকা উচিত নয়; বরং তাওবাহ করার পরপর উত্তমরূপে অজু করে ক্ষমা প্রার্থনার নিয়তে ২ রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বিশেষ তাওবাহ করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাওবাহ করার সময় অজু করে ২ রাকাত তাওবার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।