কোরআনুল কারিমের ওহিসহ দ্বীন-ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতেন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম। যা মানুষের জন্য কল্যাণকর। একবার তিনি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান ও ইসলাম সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। সে প্রশ্নগুলো কী ছিল? প্রশ্ন এবং উত্তরের ধরণই বা কেমন ছিল? তাঁর পরিচয় সম্পর্কেই বা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছিলেন?
একদিন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম মানুষের বেশ ধারণ করে আসলেন এবং উপস্থিত অনেক সাহাবায়ে কেরামের সামনে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বীন সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন করলেন। আবার নবিজীর উত্তর শুনে বিজ্ঞের মতো তা সত্যয়নও করছিলেন। হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-
হজরত ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের কাছে আত্মপ্রকাশ করলেন। তাঁর পোশাক ছিল ধবধবে সাদা। চুল ছিল কুচকুচে কালো। কিন্তু তাঁর মধ্যে সফরের না ছিল কোনো চিহ্ন; আর না আমাদের কেউ তাকে চিনতে পেরেছেন।
তিনি এসেই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসে পড়লেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুর সাথে তাঁর হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। তাঁর দুই হাত তাঁর দুই উরুর উপর রেখে বললেন-
১. হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলুন, অর্থাৎ- ইসলাম কী?
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘ইসলাম হচ্ছে-
> তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
জাকাত আদায় করবে।
রমাজান মাসের রোজা পালন করবে এবং
বায়তুল্লাহর হজ করবে; যদি সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে।’
আগন্তুক (বিজ্ঞের মতো এ কথাগুলোর সত্যয়ন করে) বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’ আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। কারণ, একদিকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করলেন, আবার অপরদিকে রাসুলের বক্তব্যকে (বিজ্ঞের ন্যায়) সঠিক বলে সমর্থনও করলেন।
২. এরপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন। অর্থাৎ ঈমান কী?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেন, ঈমান হচ্ছে-
আল্লাহ তাআলাকে বিশ্বাস করা।
তাঁর ফেরেশতাদের বিশ্বাস করা।
তাঁর (আসমানি) কিতাবসমূহ বিশ্বাস করা।
তাঁর রাসুলগণকে বিশ্বাস করা এবং
পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এছাড়াও
তাকদিরের উপর, অর্থাৎ- জীবন ও জগতে কল্যাণ-অকল্যাণ যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে- এ কথার উপর বিশ্বাস করা।
উত্তর শুনে আগন্তুক (আগের মতোই বিজ্ঞের মতো) বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’
৩. এরপর তিনি আবার বললেন, ‘‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। অর্থাৎ ইহসান কী?
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইহসান হচ্ছে-‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো। আর তুমি যদি তাকে না-ও দেখো, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।’এবারও আগন্তুক আবার প্রশ্ন করলেন- ‘আমাকে কেয়ামাত সম্পর্কে বলুন-
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না।’এবার আগন্তুক বললেন, ‘তবে কেয়ামতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন। অর্থাৎ কেয়ামতের নিদর্শন কী?তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘কেয়ামতের নিদর্শন হলো-
দাসী তাঁর আপন মুনীবকে প্রসব করবে।
তুমি আরো দেখতে পাবে- নগ্নপায়ে চলা বস্ত্রহীন হতদরিদ্র মেষ চালকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করবে।’
এরপর (অপরিচিত ধবধবে সাদা পোশাকের, কালো চুলের অধিকারী) আগন্তুক চলে গেলে আমি (ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু) কিছুক্ষণ সেখানেই অবস্থান করলাম। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন-
হে ওমর! প্রশ্নকারী আগন্তুককে চিনতে পেরেছো?
আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি হচ্ছেন হজরত জিবরিল (আলাইহিস সালাম )। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাই, মুসনাদে আহামদা, তারগিব, মিশকাত)
মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন শেখানোয় এ ছিলো হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামের কৌশল। যা থেকে আদব-শিষ্টাচার এবং দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন উম্মতে মুসলিমাহ।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম, ঈমান ও ইহসানের বিষয়গুলো হৃদয়ে ধারণ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।