জুলুম অত্যাচার সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম যা বলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
জুলুম অত্যাচার সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম যা বলে

জুলুম অত্যাচার সম্পর্কে ইসলাম ধর্ম যা বলে। জুলুম তথা অন্যায় অবিচার করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বরং এটিকে ক্ষমা অযোগ্য অপরাধ হিসেবে কোরআন হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে, যদি মাজলুম থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে না পারে। 


“আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ জালিমের কোন সাহায্যকারী হবেনা”।  (সুরা আল-হাজ্জঃ৭৯)


আল্লাহ ক্ষমাশীল  তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। কিন্তু অন্যায় জুলুম যা ব্যাক্তির হকের সাথে  সম্পর্কিত তা কখনোই ক্ষমা করবেননা। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো আমরা ব্যাক্তি, অভিবাবক, দায়ীত্বশীল, প্রতিনিধি, রাষ্ট্র প্রধান সহ সবাই কোন না কোন ভাবে অধিনস্তদের উপর অন্যায় অবিচারে লিপ্ত। জানিইনা আমরা যে আমাদের স্থানে জালিম হয়ে বসে আছি।  সামাজের সর্বস্তরে খুজলে কাউকেই পাওয়া যাবেনা স্ব স্ব ক্ষেত্রে জালিম অত্যাচারী ছাড়া। ভাই বোনের উপর, স্বামী স্ত্রীর উপর, মনিব কর্মচারীর উপর, ব্যাবসায়ী ক্রেতার উপর, শিক্ষক ছাত্রের উপর, রাষ্ট্র তার প্রজাদের উপর কিংবা এর বিপরীত এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে জুলুম অত্যাচারকে স্বাভাবিক ভাবা হচ্ছে। 


“হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে ব্যাক্তি এক বিগত পরিমান জমিতে জুলুম করলো (অর্থ্যাৎ জোরপূর্বক দখল করলো কেয়ামতের দিন আল্লাহ) তার গলায় সাত তবক জমীন পরিয়ে দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম) 


বাংলাদেশের আদালতগুলো আজ জায়গা জমীর মামলায় হাবুডুবু খাচ্ছে। মিথ্যা বানোয়াট জাল জালিয়াতি করে কে কার জায়গা জমীন ভূমি লুট করবে তার যেন এক মহোৎসব চলছে। অথচ সে জানে এই ভূমি তার নয়। হাদিসের এই বানী যদি পঠিত হতো তাহলে অন্যের ভূমি জবর দখল করার সাহস কি কারো হতো? অন্তরাত্মা কি কেঁপে উঠতোনা শাস্তির ভয়ে? কারণ এই শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা যে কারো নেই।   


“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুসলমান ঐ ব্যাক্তি যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।  (বোখারী ও মুসলিম)”


কাউকে হত্যা করা, প্রহার করা, ধন সম্পদ আত্মসাৎ করাতো নিঃসন্দেহে জুলুম, কিন্তু মুখের দ্বারা ও যে জুলুম হতে পারে সেটা আমরা মনেও করিনা। কাওকে গালি দেওয়া, পরনিন্দা করা, চোগলখোরিকরা, বা কাহারো সামান্যতম ক্ষতি করার লক্ষে কাউকে নির্দেশ দেওয়া এগুলোও জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। 


বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া হাতে পেয়ে আমরা কি না করছি। অতিতের সকল রেকর্ড ভেঙে তুমুল বেগে চালিয়ে যাচ্ছি প্রতিপক্ষের চরিত্র হননের কাজ, ট্রলবাজি সহ উপরের কাজগুলো। অথচ এগুলো মুসলিমদের চরিত্র নয়। মুসলিম হতে হলে অত্যাচারী জালিম হওয়া যাবেনা, আর অত্যাচারী জালিম হলে সে মুসলিম থাকেনা। জুলুম প্রকারান্তরে নিজের উপরেই প্রবলভাবে ফিরে আসবে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। 


“হযরত আবু হোরাইরা বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তির উপর  তার কোন ভাইয়ের যদি কোন দাবি থাকে এবং তা যদি তার মান সম্ভ্রমের উপর কিংবা অন্য কিছুর উপর জুলুম সমর্পিত হয়, তবে সে যেন আজই একেবারে নিঃস্ব হওয়ার পূর্বেই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। যদি তার কোন পুন্য অদৌ না থাকে তবে তার প্রতিপক্ষ মজলুমের গুনাহ থেকে সমপরিমাণ জুলুম তার হিসাবে শামিল করে দিবেন।”


বিশ্বব্যাপি সবল রাষ্ট্র গুলো দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর উপর শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিমদের উপর। মিয়ানমার, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন সহ আজ মুসলিমরা অন্যায় অবিচারের শিকার। নির্যাতনের জাতাকলে পদপিষ্ট লাখো কোটি নারী শিশু বৃদ্ধা। শিক্ষা চিকিৎসা সহ মৌলিক সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। অন্যায় অবিচার যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন শান্তি পৃথিবীর কোথাও  প্রতিষ্ঠা হবেনা। এ কারনে ইসলাম অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন। শক্তি সামর্থ অনুযায়ী একে রুখে দাড়ানোর নির্দেশ প্রদান করে ইসলাম। 


তবে আল্লাহ জালিমদের সুযোগ দেন, কিন্তু ছেড়ে দেননা।

লেখক: মাওলান ইব্রাহিম খলিল মাসুম