হোটেল কর্মচারীকে বকশিশ দেওয়া যাবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
হোটেল কর্মচারীকে বকশিশ দেওয়া যাবে কি?

হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে আপ্যায়নকারী (Waiter) ওয়েটারকে পরিবেশনায় সন্তুষ্ট হয়ে যদি কেউ বকশিশ দেয় তবে তা বৈধ হবে কি? নাকি ঘুসের অন্তর্ভূক্ত হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?


হোটেলে খাবার পরিবেশনকারী ওয়েটার (Waiter) কাস্টমারকে অর্ভ্যথনা জানায়; খাবার খাওয়ার জন্য সুন্দরভাবে বসার ব্যবস্থা করে দেয়। ফ্রেশ হওয়ার পর টিস্যু কিংবা তোয়ালে দিয়ে সহযোগিতা করে। আবার খাবারের অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সার্বিক দিকগুলো দেখাশোনে করে। খাওয়া-দাওয়ার পর বিল পরিশোধ করে ওয়েটারকে সুন্দর আপ্যায়নের জন্য অনেকে বকশিশ দেয়; এটা (বকশিশ) সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী?


কাউকে খুশি হয়ে বকশিশ দেওয়া বা দান করা বা উপহার দেওয়া সওয়াবের কাজ। তাই আপ্যানকারী কিংবা খাবার পরিবেশনকারীর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে যদি কেউ বকশিশ দেয় এটা ঘুস বা অনৈতিক কাজ হবে না বরং তা হবে সওয়াবের কাজ।


কাস্টমার খাবার খাওয়ার যদি যথারীতি ওয়েটারকে খুশি হয়ে স্বেচ্ছায় কিছু টাকা বকশিশ দেন তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। বরং আপনি যদি একজন গরিব মানুষকে খুশি করা বা আর্থিক সহযোগিতা করার নিয়তে তা দেন তাহলে এতে সওয়াবও হবে। এভাবে অন্যকে খুশি করার জন্য বকশিশ দেওয়া বা উপঢৌকন দেওয়ার সমর্থন ইসলামে পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- সব চেয়ে উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন-


أفضلُ الأعمالِ أن تُدْخِلَ على أخيكَ المؤمنِ سُروراً أو تقضيَ عنهُ دَيناً ، أو تُطْعِمَهُ خُبزاً



‘সবচেয়ে উত্তম আমল হলো- ‘তোমার কোনো ঈমানদার ভাইয়ের অন্তরে আনন্দ সঞ্চার করা বা তার ঋণ পরিশোধ করা বা তাকে একটি রুটি খাওয়ানো।’ (জামে) এমনকি সে যদি অমুসলিমও হয় তারপরও সওয়াব রয়েছে। এটি মানুষের বদান্যতা এবং উত্তম চরিত্রেরও বহিঃপ্রকাশ। আর এখানে ওয়েটার বা খাবার পরিবেশনকারীকে বকশিশ দেওয়ার মাধ্যমে তাকে আনন্দিত করা হয়। বিধায় তাতেও মিলবে সাওয়াব।


তবে শর্ত হলো-


হোটেল কর্মচারী অনৈতিক কাজে জড়াতে পারবে না। যেমন- যদি বকশিশ পাওয়ার আশায় নিয়মের বাইরে কাস্টমারকে সার্ভিস দেয় বা অতিরিক্ত খাবার পরিবেশন করা। অতিরিক্ত খাবার পরিবেশন করে মালিক পক্ষের ক্ষতি করা। অনুমোদন বহির্ভূত খাবার দেওয়া কিংবা খাবারের বিল কম রাখাসহ কাস্টমারকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া বৈধ নয়।


হোটেল কর্মচারি অবৈধ এসব উপায় অবলম্বন করে বকশিশ নিলে তা অনিয়ম ও ঘুষের আওতায় পড়বে। আর এটি কাস্টমার ও পরিবেশনকারী কর্মচারী উভয়ের জন্য হারাম তথা কবিরা গুনাহ। কারণ এটি অন্যের (হেটেল মালিক/কর্তৃপক্ষের) হক বা অধিকার নষ্ট করার অপরাধ। হাদিসে এসেছে-


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-


لعَن اللهُ الرَّاشيَ والمُرتشيَ


‘ঘুসদাতা ও ঘুস গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।’ ([ইবনে হিব্বান, জামে)


মনে রাখতে হবে


অন্যায়ভাবে সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো লেনদেন বা আর্থিক দানে সাওয়াব পাওয়া যাবে না। বরং তা অন্যায়। পক্ষান্তরে মালিক পক্ষের হক বা অধিকারের প্রতি সতর্ক থেকে কাস্টমারকে খুশি রাখা এবং পুনরায় এ হোটেলে খেতে আসার জন্য উত্তম সেবা দেওয়া বৈধ। আর এই সেবায় কেউ খুশি হয়ে দান বা উপঢৌকন দিলে তা গ্রহণ করাও বৈধ এবং সাওয়াবের কাজ। কারণ এটি পরস্পরের উপকারেরও শামিল। এসব ক্ষেত্রে পুরস্কার বিনিময় প্রসঙ্গে হাদিসে আরও এসেছে-


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-


مَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفاً فَكَافِئُوهُ


‘যে তোমাদের উপকার করবে, তোমরা তাকে পুরস্কৃত করো।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ)


তিনি আরও বলেছেন-


كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ


‘প্রতিটি ভালো কাজই সাদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম)


সুতরাং প্রত্যেক কর্মচারীর উচিত, নিজের মালিকের অধিকারের প্রতি সতর্ক খেয়াল রাখা। আবার যারা সেবা নিতে আসবে; তাদের অধিকারের প্রতিও সমান খেয়াল রাখা। আর উভয়ের সন্তুষ্টিতে উপঢৌকন বা পুরস্কার গ্রহণ বৈধ।আল্লাহ তাআলা সবাইকে যথাযথ হক আদায় করে দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।