রমজান হোক মহামারি করোনা মুক্তির উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৫ই এপ্রিল ২০২১ ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
রমজান হোক মহামারি করোনা মুক্তির উপায়

রমজান হিজরি বছরের নবম মাস। মানবতার মুক্তির সনদ কুরআন নাজিলের মাস রমজান। এটি মানুষের মুক্তির মাসও বটে। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই শুরু হলো মুক্তির মাস রমজান। মহামারি করোনার এ সময়ে রমজান হোক বিশ্ববাসীর জন্য মুক্তির ওসিলা। স্বাগত মাহে রমজান...।করোনা মহামারির কারণে প্রায় পুরো বিশ্ব যখন লকডাউনের কবলে নিমজ্জিত ঠিক তখন নাজাতের ঘোষণা নিয়ে এলো রহমতের মাস রমজান। রমজান নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকদের ঘোষণা-


‘রোজা রাখার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং রোজা রাখার মাধ্যমে করোনার বিস্তার ও সংক্রমণ ঘটে না। সুস্থ মানুষের জন্য রোজা রাখা নিরাপদ। এমনকি যারা দীর্ঘ সময় ধরে করোনায় ভুগছেন তারাও রোজা রাখতে পারবেন। রোজা রাখা অবস্থায় তাদের উপসর্গ যদি গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে তারা চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রোজা ভাঙতে পারেন।’


রমজান যেমন মানুষর পাপতাপ-গোনাহগুলোকে পুড়ে ছাঁই করে দেয়, যাবতীয় অন্যায়-অশান্তি থেকে মুক্তি দেয় তেমনি মহামারি করানো থেকেও মুক্তি পাবে বিশ্ববাসী- এমনটিই প্রত্যাশা সবার। রমজানের প্রাপ্তি সম্পর্কে হাদিসের ঘোষণাও এমনই। একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের করণীয় কেমন হবে তা উল্লেখ করেছেন এভাবে-


যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’


‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’


‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে (রাত জেগে) ইবাদত করবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)


রমজান মাস ও এ মাসের ইবাদতের বিনিময় এর চেয়ে উত্তম ঘোষণা আর কী হতে পারে? 


সুতরাং যারা রমজান মাস জুড়ে মহামারি করোনার ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তির আশায়-


রমজান মাসজুড়ে দিনের বেলায় রোজা পালন করবে;


রাতে কিয়াম তথা তারাবিহ-তাহাজ্জুদ আদায় করবে;


গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সাদকা করবে এবং জাকাত ফেতরা দেবে;


শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করে মুক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে;


শেষ দশকজুড়ে ইতেকাফে অতিবাহিত করবে;


তাদের জন্যই দুনিয়া ও পরকলের যাবতীয় বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন, রোগ-মুক্তির সফলতার মহা সুযোগ।


দুনিয়া ও পরকালের সব অকল্যাণ থেকে মুক্তির মহাসুসংবাদ নিয়েই আসে রমজান। এ কারণেই শাবানের চাঁদের হিসাব রাখার জন্য দিনক্ষণ গণনা করতেন বিশ্বনবি। চাঁদের হিসাব রাখার নির্দেশ দিতেন এভাবে- ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (মুসলিম)।


রমজানকে স্বাগত জানাতে দুই মাস আগে থেকে দোয়া করতেন-


হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদের জন্য রমজান মাস কবুল করুন।


-হে আল্লাহ! শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদের জন্য রমজান মাস কবুল করুন।


হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে রমজানে পৌঁছে দিন।


শুধু তা-ই নয়


রমজানকে স্বাগত জানাতে শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে চাঁদের অনুসন্ধান করতে বলতেন। চাঁদ দেখে কল্যাণের এ দোয়া পড়তে বলতেন-


اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله


অর্থ : আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত রমজান মাসে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পেতে নিয়মিত পাঁচটি সুন্নাত পালন করা। যার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সব বিপদ-মহামারি সহ যাবতীয় কল্যাণ পাবে। তাহলো-


১. অল্প হলেও শেষ রাতে সাহরি খাওয়া;


২. সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা;


৩. নিয়মিত তারাবিহ-তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া;


৪. কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা;


৫. শেষ দশকে ইতেকাফ ও লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা।


পরিশেষ...


রমজানের প্রতিটি দিন ও ক্ষণ হোক গোনাহমুক্ত জীবনের পাথেয় সংগ্রহের উপায়। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের জন্য কুরআনের হেদায়েত পেতে এবং মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে রমজানকে জানাই আহলান ওয়া সাহলান। শুভ হোক মাহে রমজান...


 #ইনিউজ৭১/জিহাদ/২০২১