গোনাহমুক্ত জীবন লাভে কুরআনুল কারিমে অনেক নসিহত ও নির্দেশ রয়েছে। আবার হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের গোনাহ মাফের জন্য অনেক পথ ও পাথেয় গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের অন্যতম একটি হলো যথাযথভাবে ফরজ নামাজের ওয়াক্তে উত্তমরূপে ওজু করা এবং নামাজ আদায় করা।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে সফলতা, নাজাত ও গোনাহ মাফের উদ্দেশ্যে এ সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। গোনাহ মাফের এ অবস্থা সবসময় চলমান থাকবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কোনো মুসলিমের যখন কোনো ফরজ নামাজ আদায় করার ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরূপে নামাজের জন্য ওজু করে, নামাজের নিয়ম ও রুকুকে উত্তমরূপে আদায় করে; তা হলে যতক্ষণ সে কোনো কবিরাহ বা বড় গোনাহে লিপ্ত না হবে, তার এ নামাজ তার পেছনের সব গোনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান থাকবে।' (মুসলিম)
হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ আদায়ের জন্য পরিপূর্ণভাবে ওজু করে ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে (মাসজিদে) যায় এবং লোকদের সঙ্গে অথবা তিনি বলেছেন, জামাআতের সঙ্গে অথবা বলেছেন মাসজিদের মধ্যে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তার গোনাহসমূহকে মাফ করে দেবেন।' (মুসলিম)
হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর আজাদকৃত গোলাম হুমরান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু খুব উত্তমরূপে ওজু করে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওজু করতে দেখেছি যে, তিনি অতি যত্ন করে ওজু করলেন। অতপর তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি অনুরূপ ওজু করে নামাজের জন্য মসজিদের দিকে যায় এবং তাঁর মসজিদে যাওয়া যদি নামাজ ব্যতিত অন্য কোনো কারণে (উদ্দেশ্যে) না হয় তবে তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।' (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় হুমরান বলেন, আমি ওসমান ইবনু আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য ওজুর পানি আনলাম। অতপর তিনি ওজু করে বললেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদিস বর্ণনা করে থাকে। আমি সেই হাদিসগুলোর ব্যাপারে অবগত নই। তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার এ ওজুর মত ওজু করতে দেখেছি। তারপর বলেছেন- যে ব্যক্তি এভাবে ওজু করবে, তার পেছনের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর তার নামাজ আদায় ও মাসজিদের দিকে যাওয়া অতিরিক্ত সাওয়াব বলে গণ্য হবে।' (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'কোনো ব্যক্তি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে পরিপূর্ণ ওজু করার পর পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ আদায় করল, তার এ নামাজ মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়।' (মুসলিম) উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, গোনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম উত্তমরূপে ওজু করা। বিশেষ করে ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তমরূপে ওজু করে নামাজে উপস্থিত হওয়া। আর এ ওজু ও নামাজে কবিরা গোনাহ ছাড়া বান্দার ছোট সব গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়।
মনে রাখা জরুরি
মুমিন মুসলমান যখন ছোট গোনাহ থেকে বিরত থাকে, ওই ব্যক্তির দ্বারা বড় গোনাহ সংঘটিত হয় না বললেই চলে। আর যদি কোনো কারণে ওই ব্যক্তি বড় গোনাহ করেই ফেলে তবে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা উক্ত আমলের মাধ্যমে বান্দার গোনাহকে হালকা করে দেবেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ নামাজের ওয়াক্তে উত্তমরূপে ওজু করে, বিনয় ও যথাযথ রুকু-সেজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।