আপনি আসলে কার উপাসক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২১ ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
আপনি আসলে কার উপাসক?

এই পৃথিবীতে আল্লাহ সব মানুষকে শিশু হিসাবে সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে পরিপক্ক বুদ্ধির মানুষ হিসাবে তৈরি করে দেন। আল্লাহ এই কাজটি করেন একটি উদ্যেশ্য নিয়ে। উদেশ্যটি হলো যে মানুষটি যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততদিন সে আল্লাহর উপাসনা করবে, মুক্তমনে, বুঝে শুনে, বিবেচনা ও অন্তঃকরণ দিয়ে এবং প্রবল ভাবে বিশ্বাস করে।


আল্লাহকে উপাসনা করার জন্যে কেউ অন্য কোন মানুষকে বাধ্য করলে বা কোনো প্রকার জোর জবরদস্তি করলে হবেনা। মানুষ নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর উপাসনার যে পথটিতে চলতে থাকে আল্লাহ সেই রোডটির নাম দিয়েছেন সিরাতুল মুস্তাকীম বা সোজা রাস্তা।


এই পথ দিয়ে আল্লাহ যেভাবে এগুতে বলেছেন সেই ভাবে চললে সোজাসুজি আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যাবে জান্নাত নামক স্থানে। আল্লাহ মানুষকে এজন্যেই বেশি বেশি বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়েছেন যাতে মানুষ জান্নাতের বন্ধুর রাস্তা চিনে নিয়ে মৃত্যুর সীমান্ত চেকপোস্ট অতিক্রম করে তার চিরস্থায়ী বাসস্থানে সঠিক ভাবে পৌঁছে যেতে পারে। 


এখন এর উল্টা দিকটি ভাবি। ধরুন আমি আল্লাহকে  উপাসনা করার সিদ্ধান্ত নিলামনা। তখন কি হবে? তখন আল্লাহ আমার সবকিছুর মালিক এই কথাটি উল্টে দিয়ে আমি নিজে আমার সব কিছুর মালিক কথাটি বিশ্বাস করতে শুরু করবো।


আল্লাহর নির্দেশনা না জেনে বা না মেনে নিজ ভাবনার নির্দেশনায় জীবন চালিত করার আরেক অর্থ নিজেই নিজের উপাসনা করা। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মাবুদ মনে করাকে আল্লাহ শরিক করা বা শির্ক আখ্যায়িত করেছেন, যার সামান্য পরিমাণও নিজে মহা দয়ালু হলেও আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না।  


আজকের পৃথিবীর অনেক মুসলমান নামধারী সহ অধিকাংশ মানুষ সবরকমের ধর্ম বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে সৃষ্টিকর্তা থাকলেও থাকতে পারেন অথবা নেই মনে করে নিজেকেই নিজের জীবনের মালিক ভেবে নিজেই নিজের উপাসক হয়ে গেছে। 


যৌক্তিক দেখানোর জন্যে মানুষ এই ভাবনাকে আখ্যা দিয়েছে মুক্তচিন্তা। মানুষ নিজেরাই বুঝিয়েছে মুক্তচিন্তা আর সিরাতুল মুস্তাকীম দুটো পরিষ্কার আলাদা রোড এবং পরস্পর বিরোধী। 


নিজেকে নিজের উপাসক ভেবে, নিজেকে নিজের ঈশ্বর ভেবে, একজন বিধৃত আসল সৃষ্টিকর্তার অস্ত্বিত্বকে অস্বীকার করার জন্যে মানুষ তার বুদ্ধির যুক্তি ব্যবহার করে চলছে। মানুষ বুঝেও বোঝেনা, অদৃশ্য আল্লাহকে পরিহার করতে যেয়ে অদৃশ্য শয়তানের উপাসনা করে চলছে সে।


আল্লাহর মালিকানাকে অস্বীকার করে বলছে, আমার জীবনের মালিক আমি, তাই আমার জীবনকে যেভাবে খুশি আমিই সেভাবে চালাবো। আমার শরীরের মালিক আমি, যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবো আমি। আমিই আমার সব, আমার মর্জিতে সব চলবে এই আমিত্ব-ভাবনা নিয়ে মানুষ পরিষ্কার শির্ক করে চলছে। 


অথচ আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুক্তমন নিয়ে শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়।’ (সূরা আনজাম, আয়াত ৩৬)। আল্লাহ আবার বলেন, ‘দূরাচারীরা কি মনে করে যে, তাদের জীবন ও মৃত্যু এবং বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জীবন ও মৃত্যু একইরকম হবে? কত ভ্রান্ত ধারণা ওদের!’ (সূরা জাসিয়া, আয়াত ২১)।


কোভিড ভাইরাসের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু অথবা স্বাভাবিক মৃত্যু আসার আগে একটু ভেবে দেখি আমি আসলে কার উপাসনা করি? আল্লাহর না আমি নিজে নিজেরই। ছবি: হুজুর(স)এর সময় থেকে শুরু হওয়া মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকী থেকে মসজিদে নববীর মিনার। অনেক সাহাবীদের (রা) অচিহ্নিত কবর আছে এখানে।