রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভে মুখর হয়ে ওঠে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি। আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিস্ট’ দল আখ্যা দিয়ে দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতারা সরাসরি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা চলছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই এই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এখন আর কোনো আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, প্রতিরোধ হবে জনগণের পক্ষ থেকে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, জনগণের বিজয়কে ধরে রাখতে হলে খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু গোষ্ঠী দলটিকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে বাংলার মাটিতে সেই চেষ্টা সফল হবে না। অপর এক নেতা আশরাফ উদ্দীন মাহাদী দাবি করেন, শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে, নতুবা শহিদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
বিক্ষোভে এনসিপির অন্যান্য নেতারাও কঠোর ভাষায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আতিক মুজাহিদ বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। একই সুরে হুমায়রা নূর বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে জনগণকে শোষণ করেছে ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাই এদের ওপর আর কোনো রাজনৈতিক সুযোগ দেওয়া যায় না।
মাহিন সরকার সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সংস্কার সম্পন্ন না করে কোনো নির্বাচন আয়োজন করলে জনগণ মেনে নেবে না। তাহসীন রিয়াজ বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক সাংবাদিকরাও ভবিষ্যতে জনগণের প্রতিরোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন। রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়াই হতে হবে প্রথম কাজ।
এছাড়া আলী নাছের খান বলেন, বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করবে তা ঠিক করার অধিকার শহিদ পরিবারের সদস্যদের আছে। মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জনগণ আগেই দিয়েছে, এখন কার্যকর করার সময়। সাইফুল্লাহ হায়দার জানান, বিচার ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, তার ছেলেকে ৭০টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং এখনো হত্যার বিচার হয়নি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, তিনি দৃঢ় ভাষায় ঘোষণা দেন।
সমাবেশের শেষভাগে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে নেতাকর্মীরা স্লোগানে মুখর করে তোলেন বায়তুল মোকাররম এলাকা। ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’—এই ধরনের নানা স্লোগানে প্রতিবাদের ভাষা জানান দেন তারা। তাদের দাবি, সংস্কার আগে, তারপরই নির্বাচন হতে পারে—তাও আওয়ামী লীগবিহীন রাজনৈতিক পরিসরে।