বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাদের মতামত জমা দিয়েছে। রোববার দুপুরে দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে লিখিত মতামত জমা দেয়। বিএনপি রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা, সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্র না বলে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলায় জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ইংরেজিতে পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ লেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের নাম মেনে নিয়েছে, তাই এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নেই।’
সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়েও বিএনপির আপত্তি রয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে, যা সমুচিত নয়। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবনা অংশে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থা বহাল রাখা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূলনীতি অপরিবর্তিত থাকা প্রয়োজন।’
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত। এটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে গেলে নির্বাচন কমিশনকে বারবার সহযোগিতা চাইতে হবে, যা জটিলতা তৈরি করবে।’
নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখার পক্ষেও মত দিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। তবে এ সংক্রান্ত আইনে একটি মুদ্রণত্রুটি রয়েছে, যা এখনো সংশোধন করা হয়নি। এই ভুলের কারণে ইসি শুনানি করতে পারছে না, যা নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।’
সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গেও বিএনপি একমত নয়। দলটি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তা আলোচনার মাধ্যমে করা উচিত। তবে আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থা বহাল রাখার পক্ষে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশন ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৩৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ‘আম জনতার দল’, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও নাগরিক ঐক্য মতামত জমা দিয়েছে। অন্যান্য দলের মতামত জমা দেওয়া বাকি রয়েছে।