মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিজিএস ৪০৩, এলটি হাইব্রিড ও রেড হিল জাতের পেঁয়াজ চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন আশিদ্রোন ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের কৃষক রায়হান আহমদ। এক শতক জমিতে চাষ করে তিনি অভাবনীয় ফলন পেয়েছেন। আশপাশের কৃষকরা তার মাঠ দেখতে আসছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এই জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। চাষে সহযোগিতা করছে লালতীর সীড কোম্পানি।
রায়হান জানান, লালতীর সীড কোম্পানি তাকে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে জমি দিয়েছিল। তিনি গত ভাদ্র মাসে দেড় শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের বীজ ছিটিয়ে ছিলেন, যা এক সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। মাঘ মাসে ফসল পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং ১০৫ দিনের মাথায় তিনি পেঁয়াজ তুলতে সক্ষম হন। তার মধ্যে বিজিএস ৪০৩ জাতটি সবচেয়ে ভালো ফলন দিয়েছে। প্রতি চার-পাঁচটি পেঁয়াজে এক কেজি ওজন হয়েছে। চাষের সময় তিনি প্রাকৃতিক সার ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রথমবারেই সফল হওয়ায় তিনি আগামীতে বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প খরচে বাম্পার ফলন পাওয়ায় আশপাশের কৃষকরাও এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর আগে ২০২৩ সালে রায়হান শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম ও স্কোয়াশ চাষেও সফল হয়েছিলেন।
করোনার সময় পরিবারে আর্থিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে কৃষিকাজে মনোযোগ দেন রায়হান। ইউটিউব দেখে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন এবং দ্রুত সফল হন। তার এই উদ্যোগ তাকে স্বাবলম্বী করেছে এবং এখন তিনি কৃষিকে পেশা হিসেবে নিতেও আগ্রহী।
বাংলাদেশের প্রথম সামার হাইব্রিড পেঁয়াজ বিজিএস ৪০৩ সাধারণত জুন-জুলাই মাসে রোপণ করা হয় এবং ৯০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। একরপ্রতি ১১-১২ টন ফলন হয় এবং এর সংরক্ষণ ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী। বিশেষ করে এর তাম্র বর্ণের রং ও ভালো গুণগত মান বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করছে।
লালতীর সীডের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশে সাধারণত শীতকালে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, কিন্তু গ্রীষ্মকালীন চাষ বাড়ানো গেলে দেশের উৎপাদন ঘাটতি অনেকাংশে কমবে। এটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে চ্যালেঞ্জ থাকে, তবে এবার খলিলপুরে লালতীরের প্রদর্শনী প্লটে ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হলে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
তিনি আরও জানান, দেশে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন পেঁয়াজ সমানভাবে চাষ করা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং ভবিষ্যতে রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে। সরকারিভাবেও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যাতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে এর আবাদ বাড়াতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।