ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে রায় দিয়েছে। আদালত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তাদেরকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রতিটি আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে, অনাদায়ে আরো দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এই মামলার বাদী তৌফিক মাহমুদ জানান, ২০২১ সালের মার্চে তিনি ইভ্যালি ডট কম নামের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ বাইক অর্ডার করেছিলেন। প্রথমবার ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তিনি ৩ এপ্রিল আরো দুটি বাইক অর্ডার করেন যার জন্য তিনি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন। তবে, ইভ্যালির পক্ষ থেকে বাইক তিনটি ৪৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করা হয়নি।
বাইক সরবরাহ না পাওয়ার পর তৌফিক মাহমুদ ইভ্যালির ধানমন্ডি অফিসে যোগাযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ তখন দুটি চেক প্রদান করে, তবে ব্যাংক হিসাবের পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেক দুটি নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে বলা হয়। তৌফিক, আসামিদের কথা বিশ্বাস করে চেকটি জমা দেননি, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত দাবি করেন। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
এই ঘটনার পর, তৌফিক মাহমুদ ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলার আবেদন করেন। তার অভিযোগ ছিল, ইভ্যালির পক্ষ থেকে তাকে আশ্বাস দেয়া হলেও তারা টাকার ফেরত বা বাইক সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। তৌফিক মাহমুদ মামলা দায়েরের পর, আদালত উক্ত মামলায় ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে এই দণ্ড প্রদান করেন।
এছাড়া, মামলার শুনানির সময় আদালত জানায়, আসামিরা আদালতের আদেশের পরও তাদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হয়নি। তারা গ্রাহকদের প্রতি প্রতারণা চালিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেছে। এই রায়ে ইভ্যালির প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আরো বেড়েছে। আদালত সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ ঘটনার পর ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ার অভিযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, তারা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সময়মতো পায়নি এবং পেমেন্টের পরও পণ্য না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর ফলে ইভ্যালির ব্যবসায়িক স্বচ্ছতার ওপর প্রশ্ন উঠছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের বিষয়ে সঠিক সময়সীমা এবং গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এই রায়ের মাধ্যমে আইন প্রতারণা এবং গ্রাহকের অধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আদালতের রায়ের পর, ইভ্যালির এমডি এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ আরো জোরালো হতে পারে। বিচারাধীন মামলার চলমানতা এবং গ্রাহকরা কীভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন।
এদিকে, এই ঘটনাটি ই-কমার্স খাতে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে এবং দেশের সকল অনলাইন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং গ্রাহকদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ করা হচ্ছে।
এই মামলার ফলে দেশের ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজন।
এছাড়া, দেশের প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকদের সঠিক সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।