নির্বাচনী সংস্কারে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নিষিদ্ধের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ ১১:২৬ পূর্বাহ্ন
নির্বাচনী সংস্কারে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নিষিদ্ধের সুপারিশ

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন কমিশন বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১৬টি ক্ষেত্রে ১৫০ সুপারিশ জমা দিয়েছে। কমিশনের মতে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক হবে।  


গুম, খুন, অর্থ পাচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কথা জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তালিকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সদস্যদের অনুদানে দল পরিচালিত হবে এবং তারা গোপন ভোটে সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। পাশাপাশি, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির অপব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।  


কমিশনের সুপারিশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা, এমপিদের বিভিন্ন সুবিধা কমানো এবং নির্বাচনকালে সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যাহারের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।  


প্রধানমন্ত্রীত্বের ক্ষেত্রে কেউ যেন দুইবারের বেশি এই দায়িত্বে থাকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, সংসদে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব রয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে নির্দলীয় ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার কথাও সুপারিশ করা হয়েছে।  


কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারদের অসদাচরণের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং কমিশনের জনবল নিয়োগের জন্য আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।  


এছাড়া, ঋণ খেলাপি ও ফেরারি আসামি প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা, তরুণ, সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ১০ শতাংশ মনোনয়ন বরাদ্দ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করার কথা বলা হয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল এবং একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাবও রয়েছে।  


ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল এবং প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ও অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শিথিল করে প্রতি পাঁচ বছর পর তা নবায়ন বাধ্যতামূলক করার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া, নির্বাচনকালীন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ২০১৮ সালের রাতের ভোটে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।  


কমিশনের মতে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। তারা মনে করেন, এই সংস্কারগুলো সময়োপযোগী এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।