দেশের সাধারণ মানুষের নিত্যব্যয় যখন প্রতিনিয়ত বাড়ছে, তখন বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ধাক্কা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ লিটারের বোতলের দামও ৭০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২২ টাকায়। শুধু তাই নয়, খোলা তেলেও দাম বেড়েছে ১২ টাকা করে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
সরকারি যুক্তি—তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে যে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম স্থিতিশীল, তখন দেশের বাজারে এতটা হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি কীভাবে যুক্তিসঙ্গত? এখানেই সরকারের পরিকল্পনা ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দুঃখজনকভাবে, এসব সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভোক্তার অবস্থান প্রায় উপেক্ষিত থাকে। বৈঠকে আমদানিকারক ও উৎপাদকদের দাবি শোনা হলেও ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণের পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো অবস্থান দেখা যায়নি। সরকারের উচিত ছিল—দাম না বাড়িয়ে শুল্কছাড় নবায়নের মতো বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা। তেল কোম্পানির লভ্যাংশ কমিয়ে, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করে অথবা ভর্তুকির মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখা যেত।
এও লক্ষণীয়, দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, যেমন—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর—তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। মূল্য নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেও ভোক্তার পক্ষে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয়াটা কেবল হতাশাজনকই নয়, বিপজ্জনকও।
গণমানুষের কথা ভাবতে হলে এখনই সময় সরকারের জবাবদিহি ও পরিকল্পনা গ্রহণের। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, অন্যদিকে পরিবহন খরচ, শিক্ষাখাতে ব্যয়, স্বাস্থ্যসেবার মূল্য—সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত চাপে থাকছে। তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং প্রতিনিয়ত তাদের কাঁধেই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে।
সরকারকে এখনই ভাবতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ও মানবিক কৌশল কীভাবে গ্রহণ করা যায়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও স্বচ্ছ নীতিমালা ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। একইসঙ্গে জনগণের স্বার্থে বিকল্প ব্যবস্থা যেমন সরকারি তেল বিপণন, ভর্তুকি প্রদান, ন্যায্য মূল্যের দোকান কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে হবে।
তেল কোম্পানির সুবিধার চেয়ে জনগণের দুর্ভোগ বড়—এই বোধ না ফিরলে আস্থা হারাবে সরকার, ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র।