গাজা যুদ্ধ : মানবিক বিপর্যয়, নিষ্ক্রিয় জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। বছরের পর বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক সংঘাত নয়, এটি পরিণত হয়েছে এক নৃশংস মানবিক সংকটে। নিরীহ শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের মৃত্যু যেন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত জাতিসংঘ আজ কার্যত অসহায়। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের শেষ নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন সংকটে জাতিসংঘ যখন সক্রিয়, তখন গাজার ব্যাপারে তাদের ভূমিকা একেবারেই নীরব। এর অন্যতম বড় কারণ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের ভেটো ক্ষমতা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গাজা ইস্যুতে জাতিসংঘে তোলা বেশিরভাগ প্রস্তাবই যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় আটকে গেছে। ফলে গাজার জনগণকে রক্ষা করতে জাতিসংঘের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইতিহাস বলছে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুরু হয়েছে এই সংকট। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল। ২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরও আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে কঠোর অবরোধ জারি রেখেছে তারা। ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর অবরোধ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে গাজার মানুষ ন্যূনতম খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে পড়েছে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বহুবার উঠলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। একদিকে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ, অন্যদিকে হামাস-ফাতাহ বিভক্তি ফিলিস্তিনিদের দুর্বল করেছে। গাজা সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন UNRWA মানবিক সহায়তা দিলেও যুদ্ধের আগুনে তারাও আক্রান্ত। ইসরায়েলের হামলায় এসব সংস্থার অফিস পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার ওপর অবরোধ প্রত্যাহার, দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা এবং ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হলে এই যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। নইলে মানবতার এই রক্তক্ষরণ চলতেই থাকবে।

লেখক: বিজয় কুমার,সাবেক শিক্ষার্থী ,যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।