ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ: আমেরিকার জন্য নতুন যুগের সূচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ: আমেরিকার জন্য নতুন যুগের সূচনা

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি সোমবার, ট্রাম্প তার অফিসে যোগদান করবেন, যেখানে তিনি দেশের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগের দিন, ১৯ জানুয়ারি রোববার, ওয়াশিংটনে এক বিজয়োৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। 


শপথ গ্রহণের আগে ট্রাম্প তার সমর্থকদের জানান, প্রথম থেকেই তিনি ঐতিহাসিক গতি এবং শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করবেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রথম দিন থেকেই আমেরিকান জনগণের জন্য তিনি দুর্দান্ত কিছু করবেন। ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলেছেন, সীমান্তে অভিবাসীদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করতে তিনি সকল পদক্ষেপ নেবেন। তার মতে, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অপরাধী গ্যাংগুলিকে আমেরিকায় প্রবেশে বাধা দিতে হবে এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। 


বিজয়োৎসবে ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলেন, ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্যরা আমেরিকায় প্রবেশ করে দেশটিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তিনি ঘোষণা করেন, এই গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্পের ভাষায়, "এরা খুবই রুক্ষ মানুষ। এরা আমাদের দেশকে নরক বানাচ্ছে।" এর মাধ্যমে তিনি তার কঠোর অভিবাসী নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। 


নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তার আমলে আমেরিকার সকল সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কয়েকদিনে একাধিক প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করবেন। এই নির্দেশগুলির মধ্যে তিনি অভিবাসন নীতি, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে কিছু বড় সিদ্ধান্ত নেবেন।


ট্রাম্প বলেন, তার প্রথম দিনটি হবে দেশবাসীর জন্য সেরা দিন এবং প্রথম সপ্তাহে আমেরিকা নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে। এরই মধ্যে তিনি তার প্রথম ১০০ দিনকে একটি "অসাধারণ" সময়সীমা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে তিনি ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 


এছাড়া, ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের সময়ে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, তার ভাই রবার্ট কেনেডি এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পর্কিত বাকি নথি তিনি প্রকাশ করবেন। ১৯৬৩ সালে জন এফ কেনেডি এবং ১৯৬৮ সালে রবার্ট কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিংকে হত্যা করা হয়। 


ট্রাম্প এর আগেও ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, সে সময় জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে সিআইএ এবং এফবিআইয়ের চাপের মুখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি গোপন রাখা হয়েছিল। এখন ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সেই নথি প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 


বিবিসি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমদিনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে থাকবে ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি, তেল উত্তোলন বৃদ্ধি এবং ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সমর্থককে ক্ষমা করার উদ্যোগ। 


এছাড়া, ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন। এই পদক্ষেপগুলি তার প্রশাসনকে কার্যকর করতে এবং দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে সাহায্য করবে বলে তিনি আশা করেন। 


ট্রাম্পের এই শপথ গ্রহণ এবং তার ঘোষণাগুলি আমেরিকার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ট্রাম্পের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো বিতর্কিত হতে পারে, তবুও তার সমর্থকরা তার এই আগ্রাসী পদক্ষেপের প্রতি আশাবাদী। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হল, আমেরিকার মানুষের জন্য একটি শক্তিশালী, নিরাপদ এবং উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিত করা।


এখন দেখার বিষয়, তার শপথের পর বাস্তবে কী ধরনের পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করবেন এবং তা কতটা কার্যকর হবে। তবে, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে, যা দেশটির ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে।