পুলওয়ামায় যখন জওয়ানের রক্ত ঝরছে, তখন হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে প্রধানমন্ত্রী। উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে, নৌকায় চড়ে ব্যস্ত শুটিংয়ে। তাই রাহুল গান্ধী বললেন, ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ আর তার ‘ফটো শুট সরকার’! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।তাতে অবশ্য দমেননি মোদী। ‘সোল শান্তি পুরস্কার’ নিয়ে শুক্রবার রাতে দেশে ফেরেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। জানা গেছে, দিল্লির বিজেপি কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন মোদীর ছবি-সহ প্ল্যাকার্ড হাতে বিমানবন্দরের বাইরে জড়ো হন।
গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে যথারীতি তাদের দিকে হাত নাড়েন মোদী। কার্যত একটা ছোটখাটো রোড-শোই সেরে ফেলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী কতটা ‘প্রচারলোভী’ এই ঘটনা তার আরও একটা প্রমাণ। পুলওয়ামার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রায় বন্ধ রেখেছে, তখন মোদী নিজেদের কর্মসূচিতে অনড়। প্রচারের ফায়দা লোটার বিন্দুমাত্র সুযোগ হাতছাড়া করতে তিনি নারাজ। একই পথে হাঁটছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।পুলওয়ামা প্রসঙ্গ তুলে এ দিন তিরুপতির জনসভায় ‘প্রচারলোভী’ মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল। তার কথায়, ‘এই আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলেন। কিন্তু পুলওয়ামায় যখন ৪০ জওয়ানের রক্ত ঝরছে, সে সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তিনি নিজের উপর ছবি বানাচ্ছেন।
বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই জওয়ানদের যন্ত্রণার। মৃত্যুমুখী জওয়ানদের সাহায্যের থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো, নৌকাবিহার করা। এখনও নিহত জওয়ানদের পরিবারের কাছেও যাননি তিনি।’ মোদীর শুটিংয়ের ছবি ফাঁস করে গত কাল থেকেই খড়গহস্ত কংগ্রেস। আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কংগ্রেসের প্রকাশ করা সব ছবিই পুলওয়ামার ঘটনার আগের। হামলার খবর পেতে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মিনিট দেরি হয়েছে। তার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনে দফায় দফায় কথা বলেন তিনি। আবহাওয়া এমনিতেই খারাপ ছিল। তার উপর পুলওয়ামার ঘটনা হওয়ায় রুদ্রপুর যাওয়া বাতিল করে মোবাইল ফোনে নমো-নমো করে সভা করেন।
রাম নগর গেস্ট হাউসে বসে ফের সকলকে ফোন করেন। দেরিতে খবর দেওয়ার জন্য ডোভালের উপরে রেগেও যান। প্রধানমন্ত্রী কিছু খাননি এই গোটা সময়। পৌনে সাতটা নাগাদ বরেলী পর্যন্ত সড়ক পথে এসে দিল্লি ফেরেন। কিন্তু কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছেন, একে তো সচিবালয়ের এটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়। দুই, প্রধানমন্ত্রী যদি পুলওয়ামার ঘটনা জানতেন, তা হলে রুদ্রপুরের সভায় তার উল্লেখ করলেন না কেন? পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছে দুপুর ৩টে ১০ মিনিটে। আর দূরদর্শন প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার করেছে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে। সেই বক্তৃতায় পুলওয়ামার উল্লেখ নেই। জওয়ানদের স্মৃতিতে নীরবতা পালনের কথাও নেই।
তৃতীয় সব থেকে বড় যে প্রশ্নটি কংগ্রেস তোলে তা হল, হামলার দু’ঘণ্টা পরেও যদি সে কথা প্রধানমন্ত্রী না জানেন, তা হলে সেটা তো জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে আশঙ্কার বিষয়! পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের হামলার দু’ঘণ্টা পরেও প্রধানমন্ত্রীর মুখে একটি শব্দও নেই! তা হলে কি তাকে জানানো যায়নি? তিনি মোবাইলে বক্তৃতা দিতে পারেন, কিন্তু তাকে মোবাইলে হামলার খবর জানানো যায় না? একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই এর জবাব দিতে পারেন। যে কারণে রাহুল টুইট করেছেন, ‘৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পরেও ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দেশের হৃদয় ও নিহত জওয়ানদের ঘরে দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে, আর তিনি হাসিমুখে ফটোশুট করছেন। ফটোশুটসরকার।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।