কত ভিডিও দেখলাম নদীর জায়গা উদ্ধার হইল না !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২রা জুলাই ২০২৪ ০৬:১৭ অপরাহ্ন
কত ভিডিও দেখলাম নদীর জায়গা উদ্ধার হইল না !

অরুয়াইল বাজারে তিতাস নদী দখল করেছে আজ না কয়েক বছর ধরে। আমরা শুনেছি কিছু দিন পর পর সরকারি ভাবে নদী উদ্ধার করতে প্রশাসনের লোক মাপে তারপর দাগ(×) চিহ্ন দিয়ে যায়। সাংবাদিকরা দল বাইন্ধা আইয়া লেখালেখি করে। আবার আমার নাতির একটা ফেসবুক আছে এটা দেহি নদী উদ্ধারের কথা। কিন্তু নদী উদ্ধার হতে আর দেখলাম না অরুয়াইলে। আমি আপনাদের ব্যাকটেক দেখে বুঝি  আপনারা সাংবাদিক। অরুয়াইলের দখল দেখতে আইছেন! আপনারা যে খানে দাঁড়িয়ে আছেন যা দেখতাছো এ সব নদীর জায়গা দখল করে দোকানপাট কইরা বইসা রয়েছে। 


শুনেন আমি বলি কিছুদিন আগে বাজারে খুব গরম গেছে। যারা যারা দখল করছে তারার নামে সরকারি জায়গা খালি করতে আইনি চিঠি আইছে। কিন্তু অহন বাজারে হেরা কইতাছে জায়গা উদ্ধারের চিঠি পাইয়া তারা বলে মামলা কইরা দিছে। এই মিয়া আমার কথা তুমি ভিডিও করতেছো। কত ভিডিও দেখলাম নদীর জায়গা উদ্ধার হইল না। তাইনে আইছে ক্যামেরা লইয়া। শুনেন নদীর জায়গা উদ্ধার করতে আইলে দখলদাররা মামলা কইরা দে। অরুয়াইলে সব টাকার পাওয়ার বুঝলেন সাংবাদিক ভাইয়েরা।’

সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজারে ব্রিজের নিচ থেকে দক্ষিণ বাজার মার্কেট এলাকায় সরকারি নদীর জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে গেলে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে এসব কথা বলেছেন স্থানীয় অরুয়াইল বাজার এলাকার বাসিন্দা ৮৫ বছরের বৃদ্ধ রহিম মিয়া। 


এ সময় তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, এতো নিউজ করে লাভ কী? অরুয়াইলে সরকারি জায়গা দখলের রাজত্ব তো বন্ধ হয় নাই। আরো দিনের দিন দহলত্ব বেড়েছে। সরেজমিনে অরুয়াইল গেলে জানাযায়, সরাইল উপজেলা  অরুয়াইল বাজারের নদী জায়গাসহ সরকারি জায়গা বে-দখল হয়ে আছে। 


এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকবার উপজেলা প্রশাসন সরকারি জায়গায় উদ্ধার করতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও। হঠাৎ করে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়ে যায়। 


এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ,জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নং ১৮,২০,০০০০ ,০১৮ ,০৬,০০১,১৫,(২৪) অং-১-১১০৭। বিষয়: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন সরাইল উপজেলা অরুয়াইল বাজার সংলগ্ন তিতাস নদী এবং সংযুক্ত খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং দুষণরোধ কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন অরুয়াইল ইউনিয়নের  আবু বকর সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তি। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালে অরুয়াইলের কয়েক জন  জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে আবেদন করলে কমিশনের সচিব অরুয়াইল বাজারে তিতাস নদী ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলে।


জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা মতে গত ৯ মে, উপজেলা সহকারী কমিশার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা( রিপা) সরকারি জায়গা খালি করতে ৩০ জন নদী দখলদারকে চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দখল ছাড়তে।


 কিন্তু গতকাল ৩০ জুন অরুয়াইলে গেলে দেখা যায় নদীর দখল ছাড়ছেন না দখলদাররা রয়েছে দখল তবিয়তে। বাজারে অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অরুয়াইল বাজারে যতবার সরকারি জায়গা উদ্ধারের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকবারে কোন না কোন ভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে এই দখলদাররা। এই দখলদারেরা বড় একটি সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের আশ্রয় নিয়ে এ দখল চালিয়ে যাচ্ছে। এইবার প্রশাসন যেভাবে ধরেছিল মনে করেছিলাম উদ্ধার হবে নদীর জায়গা। কিন্তু শুনতেছি  দুইজন নাকি মামলা করেছে। এখন সরকারি জায়গায় উদ্ধার করতে মামলা নাকি বাধা !


অরুয়াইলের স্থানীয় লোকরা বলেন,এইভাবে দখলের রাজত্ব তারা আর কতদিন চালাবে? আমরা চাই অরুয়াইলে সকল সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার হোক। এ দখলের রাজত্ব আর কতো দিন! বন্ধ হবে কবে? মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মো.নুর উদ্দিন মামলার কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক আগে  থেকে এ সম্পত্তি নিয়ে আদালতে এলএসটি  মামলা চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে আমাকে উচ্ছেদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে  আদালতে মামলা দেওয়া হয়েছে।


সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা (রিপা)বলেন,নদীর জায়গা উদ্ধার করতে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।  মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন,আইনি ভাবে মামলার জবাব দেওয়া হয়েছে। 


 উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.মেজবা উল আলম ভূইয়া বলেন, আইনের মাধ্যমে মামলার জবাব দেওয়া হয়েছে।সরকারি জায়গা উদ্ধার করা একটি  চলমান প্রক্রিয়া। সরকারের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে  কিছু কাজ বাকি রয়েছে। শেষ হলেই নদীর দখল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।