হলিউড, বলিউড, ঢালিউড এর সেলিব্রেটিদের সাথে সেলফি তুলতে কার না মন চায়। ঠিক একইভাবে দেশের বড় বড় রাজনীতিবিদ, আমলা ও প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের সাথে সেলফি তোলা যেন দিন দিন নিয়মে পরিণত হচ্ছে। তবে এক শ্রেনীর মানুষ অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে সেই ক্ষণ। এনড্রয়েড ফোন অনেকটা সহজলভ্য থাকায় এখন আর সেই ক্ষণ গণনার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না। সুযোগ এলে সাথে সাথে ফটোশেসন বা সেলফি তুলতে ভুল করেন না সেই সকল অসাধু ব্যক্তিরা। পরবর্তীতে সেই ছবি দেয়ালে সাটিয়ে নিজেকে ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে হরহামেশাই নানাবিধ অপকর্ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে অনেকেই। আর এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয় সেই সকল নামকরা রাজনীতিবিদ, আমলা ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের।
বিশেষ করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো অভিযান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে পরিচালিত অভিযানে এমনটি লক্ষ্য করা গেছে। এসবের দায় নেবে কে? আর এজন্য দায়ী-ই বা কারা ? তবে সচেতন মহলের মতে, কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠান যা-ই হোক সেখানে সরকার প্রধান ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যতীত ব্যক্তিগত কোন ছবি টানানো যাবে না। আর এটা করা সম্ভব হলেই কেবল এ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশকে সুখী, সমৃদ্ধ, দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। যার মুখ্য চালিকাশক্তি হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ রূপকল্পে একুশ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচিতে জড়িয়ে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলো। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য রাষ্ট্র তথা সরকার সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তিরা রাতারাতি ক্ষমতাবান ও ধনী হওয়ার মানসে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী মন্ত্রী কিংবা এমপি, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কৌশলে ছবি তুলে রাখে। কেউবা আবার দাওয়াতবিহীন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েই সেলফি তোলার ধান্দায় থাকে। পরবর্তীতে ওই ছবিগুলো দিয়ে তাদেরকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কাছে যত বড় মানের নেতার সাথে ছবি/সেলফি থাকে সে ততোই ক্ষমতাধর হিসেবে জাহির করে। সুবিধাবাদী চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়ে নানা পথে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রাজনীতিতেও পদ ও পদবি অর্জন করার মতো ক্ষমতাবান হচ্ছে কেউ কেউ। অতীতে এ ধরণের ঘটনা খুব একটা দেখা না গেলেও বর্তমানে সহসাই চোখে পড়ছে এ ধরণের কার্যক্রম। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত এ চিত্র এখন মামুলি ব্যাপার।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ক্যাসিনো অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন নাগরিকসহ সুশীল সমাজ। এছাড়া মহামারী করোনা ভাইরাস যখন বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে ঠিক তখনই এক শ্রেনীর অসাধু চক্র অর্থ লোভে অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি চাল চুরির ঘটনা ঘটেছে এই মহামারীর মধ্যে। নকল ওষুধ (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যাক্সিসল, হ্যান্ড রাব, মাস্ক) ধরা পড়েছে প্রশাসনের অভিযানে। সর্বশেষ মহামারী করোনার দুর্যোগকালীন সময়ে করোনা পরীক্ষা করার অনুমোদন এনে মানুষের সাথে প্রতারণা করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। যার প্রমান পাওয়া গেছে র্যাবের অভিযানে।
এই সেলফি বা ছবি ব্যবহার করে যারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তাদের ব্যাপারে কথা বলতে একাধিক রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে কেউ-ই কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, বর্তমান জনবান্ধব সরকার যখন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঠিক তখনই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের সাথে সেলফি/ছবি ব্যবহার করে উন্নয়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে একটি মহল। তাদের মতে, এ কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ ধরণের ছবি/সেলফি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তারা।