প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২০, ২৩:২
কষ্টে ভরা বিলকিস বেগমের (৪০) জীবন। ১৯৯৭ সালে বিয়ের পর কোল জুড়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু বিয়ের দশ বছর পর ২০০৭ সালে স্বামী রুহুল আমিন তাকে ডিভোর্স দেয়। সন্তান দুটি নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন বিলকিস বেগম। অনোন্যপায় হয়ে বরগুনার আমতলি উপজেলার দক্ষিণ টেপুরা গ্রামে পিতা মৃত মতিউর রহমানের বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় সেখানেও বেশী দিন থাকা হয়না তার। দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া
এলাকায় বড় বোনের কাছে চলে যান। তখন ছেলে মহিদুলের বয়স ০৭ বছর আর মেয়ে তামান্নার বয়স ০৪ বছর। নিজে মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলে মেয়েদের খাদ্য সংস্থান করতে না পেরে মেয়েকে গ্রামে নানির কাছে বরগুনা পাঠিয়ে দেন এবং ছেলেকে তুরাগ এলাকায় একটি হাফেজী মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। ২০১২ সালে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ একদিন খবর পান ছেলে মহিদুল মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছে। সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন বিলকিস। সন্তানের সাথে হারিয়ে যায় তার সুখের স্বপ্ন। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে ডিএমপি'র তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন যার নম্বর- ১৯, তারিখ ২৬/০২/২০১২। সন্তানকে হারিয়ে চোখের জলে কাটে বিলকিসের ০৮ টি বছর।
সেখানেই কলেজ প্রভাষক মাওলানা আর আই এম অহিদুজ্জামান এর সাথে পরিচয় হয় মহিদুলের। গত কয়েকদিন আগে মহিদুল তার সব ঘটনা প্রভাষক জনাব অহিদুজ্জামানকে খুলে বলে এবং মা'কে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়। জনাব অহিদুজ্জামান বিষয়টি পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম' কে অবহিত করেন এবং সবিস্তার খুলে বলেন। পুলিশ সুপার সম্পূর্ণ বিষয়টি মনোযোগের সহিত শোনেন এবং তৎক্ষণাত পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার
ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান পূর্বক মহিদুলের মা'কে খুজে বের করার দায়িত্ব দেন। পুলিশ সুপার মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং জনাব অহিদুজ্জামানের সহায়তায় বরগুনার আমতলী থানা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের সাথে আলাপ আলোচনা করে মাহিদুলের মা, বোন, নানী, মামা এবং খালা কে খুজে পেতে সক্ষম হন। এদিকে তুরাগ থানার জিডিটিও যাচাই বাছাই করা হয়।
যাওয়া ছেলেকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং থানা প্রাঙ্গণে এক অশ্রুশিক্ত আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।