প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২০, ৪:২৪
নৃশংস, মর্মান্তিক, পাশবিক প্রচলিত এসব অভিধার কোনোটিই অবিশ্বাস্য ঘটনাটিকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না। যে সন্তান বাবা-মায়ের নয়নের মণি, সেই সন্তানই বাবার হাতে প্রাণ হারালে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বৈকি। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে। বিদেশে যাওয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে চার লাখ টাকা চেয়ে না পাওয়ায় নিজের শিশু সন্তানকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড বাবা জুলহাস। তারই করা অপহরণের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য জানতে পারে র্যাব-১০।
এ ঘটনায় জুলহাস ও তার সহযোগী জুয়েল বেপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান খান জানান, গত ২৯ জুন র্যাব-১০ কার্যালয়ে হাজির হয়ে জুলহাস অভিযোগ করেন, তার ছেলে মাহিমকে ২৭ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।
তার অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি রাজমহল হোটেলের সামনে থেকে অপহরণে জড়িত জুয়েল বেপারীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল অপহরণের কথা স্বীকার করে। একইসঙ্গে সে জানায়, অপহরণে শিশুটির বাবা জুলহাস ওরফে ফারুক ওরফে গুড্ডাও জড়িত ছিল। জুলহাসকে মাতুয়াইল দরবার শরীফ মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন সে জুয়েলের সহায়তায় মাহিমকে ‘অপহরণ’ করে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হলে ওইদিন সন্ধ্যায় মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ী ময়লার ডিপো সংলগ্ন গ্রীন মডেল টাউন এলাকায় কাশবনের ভেতর বালু চাপা দিয়ে বাসায় চলে যায়। পরে জুলহাস সন্তান অপহরণ হয়েছে মর্মে যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করেন। অপহরণ প্রমাণের জন্য সে জুয়েলকে দিয়ে মুক্তিপণ চেয়ে নিজের মোবাইল ফোনে একটি মেসেজও পাঠায়। র্যাব-১০ এর একটি দল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানো স্থান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় শিশুটির মা স্মৃতি আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন।