প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ২৩:১৮
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের সুমন নামের এক কলেজ ছাত্রকে একই এলাকার তাঁর বন্ধু মিঠু হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মঙ্গলবার ওই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ পরিদর্শক(এসআই)স্বপন কুমার আদালতে মিঠু সহ অপর দুই আসামী মিঠুর ভাই রাশেদ ও রাজুকে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় মিঠু ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন বলে বোরহানউদ্দিন থানার ওসি ম. এনামুল হক জানান। এদিকে বোরহানউদ্দিনে ওই হত্যাকান্ড নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কী কারণে সুমনকে হত্যা করা হলো। মিঠু সুমনকে একা হত্যা করে কীভাবে এ লাশ দূরবর্তী স্থানে টেনে মাটি চাপা দিয়েছে।
তাঁর সাথে আর কেউ ছিলো কীনা এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। চলছে নানা সমীকরণ ।তবে ওসি এনামুল হক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিঠু সুমনকে মেরে তাঁর সীমকার্ড ব্যবহার করে মুক্তিপন আদায়ের কথা বলেছে। মিঠুর পরিকল্পনা ছিলো সুমনের প্রবাসী বাবা, অন্য চাকুজীবি দুই ভাইয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খসানো যাবে। পুলিশ সুত্রে আরো জানা যায়, মিঠু এর আগেও মাদক দ্রব্যসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।স্থানীয়রা জানান,মিঠুর বিরুদ্ধে মানুষকে মারধর, মাথা ফাটিয়ে ফেলা সহ একাধিক চুরির অভিযোগ আছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে সুমনকে অপহরণের দুইদিন পর ঘটনার সাথে জড়িত মিঠুকে পুলিশ গ্রেফতার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সুমনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। একই সময় মিঠু জানায়, সে আর সুমন দীর্ঘসময় ধরে গাজা সেবন করে। সুমন নেশায় বুদ হয়ে গেলে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে শ^াসরোধ করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়।সোমবার বিকালে সুমনের মা মমতাজ বেগম সুমনের দুই ভাই রাশেদ ও রাজুর নাম উল্লেখ করে ও ৩ জনের নাম উল্লেখ না করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সুমনের মা মমতাজ বেগম ও মামী জান্নাত বেগম জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে সুমন তাঁর খালাতো ভাই সজিব ও সোহেলের সাথে স্থানীয় বোরহানগঞ্জ বাজারে যায়। ওই সময় সুমনের ফোনে একটি কল আসে। সজিব ও সোহেলকে অপেক্ষা করতে বলে সুমন কোথায় যেন যায়। অনেক সময় হয়ে গেলে ১ ঘন্টা পর সজিব সুমনকে কল করে। তখনও সুমন অপেক্ষা করতে বলে। রাত ১০ টার দিকে সজিব ফের ফোন করলে তাঁর ফোন বন্ধ পায়। এক সময় তাঁরা বাড়ি ফিরে এসে সকলকে জানায়। তাঁরা আরো জানান, সুমনকে না পাওয়া যাবার পর মিঠু সহ তাঁর বন্ধু বান্ধবের বাড়িতে খোঁজ করেন। কেউ সন্ধান দিতে না পারায় রবিবার(২১ জুন) বোরহানউদ্দিন থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন।
ডায়রী নাম্বার-৭৯১। উল্লেখ্য সোমবার(২২ জুন) দুপুরে সুমনকে ডেকে নিয়ে যাবার দুই দিন পর মাটি খুঁড়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের আট নাম্বার ওয়ার্ডের মোশারেফ মোল্লার সুপারী বাগান থেকে তাঁর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(লালমোহন সার্কেল) মো. রাসেলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।সুমন ওই এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী মফিজুল ইসলামের ছেলে। সে উপজেলার সরকারি আবদুল জব্বার কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
গ্রেফতার হওয়া মিঠু পক্ষিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমউদ্দিনে ছেলে। সে স্থানীয় বোরহানগঞ্জ বাজারে ওয়ার্কশপের দোকান করে। বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)এনামুল হক আরো জানান, মামলাটি সতর্কতার সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। যদি আরো কেউ জড়িত থাকে তা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।