করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর হজযাত্রীদের সৌদি আরবে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য স্পর্শকাতর হওয়ায় সৌদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেবে না বলে জানিয়েছেন তারা।এদিকে, হজযাত্রা নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ হাজার ৫শ’ নিবন্ধিত হজযাত্রী চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার দরুণ এবার হজযাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পবিত্র হজের আর মাত্র ৩৮ দিন বাকি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই পবিত্র হজ হবার কথা। আগামীকাল পহেলা জিলকদ থেকেই সৌদি আরবে বিশ্বের হজযাত্রীদের প্রবেশের কথা ছিল। আর ৫ জিলহজ পর্যন্ত সর্বশেষ হজ ফ্লাইট সৌদিতে যাওয়ার কথা ছিল। গত বছর পহেলা জিলকদের রাতেই বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি হজ এজেন্সি রাজশাহী ট্রাভেলসের ১০০ হজযাত্রী (এসভি-৮০৩) ফ্লাইট যোগে সৌদি গিয়েছিল।
বর্তমানে দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজকীয় সৌদি সরকার ১৪৪১ হিজরীতে পবিত্র হজ হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে কালক্ষেপণ করছে। ফলে করোনার কারণে চলতি বছর হজ না হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ ভাবছেন চলমান মহামারি স্বাভাবিক হলে সীমিত আকারেও হজ হতে পারে। এ জন্য সৌদি সরকার হজের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে বিলম্ব করছে।
গত সাড়ে তিন মাস যাবত সৌদির সাথে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ। দীর্ঘদিন পর রোববার দেশটি থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মক্কার মসজিদগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। মক্কা থেকে বাংলাদেশ হজ মিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ইতোমধ্যে সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কম্বোডিয়া চলতি বছর হজ বাতিল ঘোষণা করেছে। হজ বাতিল হবার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম শেখ মো. আব্দুল্লাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, হজ বাতিল হলে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পরের বছর অগ্রাধিকার দেয়া হবে।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার এখনো হজ বাতিলের ঘোষণা দিতে পারছে না। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের পরেই সরকার হজ নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দিবে।
সৌদি -বাংলাদেশ দ্বি পাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮জন হজযাত্রীর হজে যাওয়ার কথা ছিল। দফায় দফায় হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হলেও হজযাত্রীদের মধ্যে দ্বিধা দেখা দেয়ায় অনেকেই নিবন্ধন করেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড জানায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এযাবৎ ৩ হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জন নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর হজ (অতিরিক্ত সচিব) মাকসুদুর রহমান রোববার জানান, মরণঘাতী করোনা মহামারিতে এবার হজ হবে কিনা এ বিষয়ে সৌদি সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। হজের ব্যাপারে রাজকীয় সৌদি সরকারের ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। এ ব্যাপারে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও কাউন্সেলর হজ উল্লেখ করেন।
এদিকে, সম্প্রতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো. আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করায় তার উত্তরসূরি কে হবেন তা’ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে একজন সৎ, অভিজ্ঞ বিচক্ষণ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেবেন এমনটাই অনেকের প্রত্যাশা।অন্যদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হজের ব্যাপারে সৌদি সরকারের কাছ থেকে এখনও আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তাদের সিদ্ধান্তের পরেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে হজের ব্যাপারে করণীয় সর্ম্পকে জানানো হবে।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম রোববার বলেন, হজের বিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। করোনা মহামারীতে হজ নিয়ে সউদী সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রাজশাহী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে হজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় হজ এজেন্সিগুলো ও নিবন্ধিত হজযাত্রীরা চরম উৎকন্ঠায় রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে হজ ও ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো দেউলিয়ার পথে। অফিস ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে পাছে না এজেন্সিগুলো। এজেন্সিগুলোর মালিকরা মূলধন ভেঙ্গে বসে বসে খাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।