বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে রাজশাহী এসে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে শুরু হয় আম্পানের তাণ্ডব। সারারাত এটি দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার পর এটি রাজশাহীতে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট উইনডি ডটকমের তথ্যমতে, সকাল ১০টার দিকে নিম্নচাপটি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছিল।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদ বলেন, আম্পান এখন রাজশাহী অঞ্চলে আছে। আম্পান ঘূর্ণিঝড় (বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের ওপরে থাকলে ঘূর্ণিঝড় বলে) থেকে একধাপ নিচে নেমেছে। এটা এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে আছে। আমরা কেবলই এটাকে নিম্নচাপ হিসেবে ইস্যু করলাম। সুতরাং এর কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত এটা ঘূর্ণিঝড় রূপেই ছিল।
তিনি আরও বলেন, আম্পান উপকূল অতিক্রম করার পর সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা এসব অঞ্চল অতিক্রম করে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্থল নিম্নচাপ রূপে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, রাজশাহীতে এখন আম্পানের নিম্নচাপ রয়েছে। কিন্তু মূল কেন্দ্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত করেনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার।
এটি অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রায় পড়ে না। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এখনও আকাশ মেঘলা। এখন নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। আম্পান অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫১ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে সাতক্ষীরায়। এটি বাংলাদেশে আম্পানের সর্বোচ্চ গতি বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস। আম্পান একই অঞ্চলে কিছু সময়ের বিরতিতে দুইবার আঘাত হানে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ওই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, একটা ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাসার্ধ থাকে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। আর ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র থাকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাস থাকে কম, আকাশ থাকে পরিষ্কার। ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাসার্ধের সম্মুখ অংশ প্রথমে আঘাত হানে। তারপর যখন কেন্দ্রের অংশে যায়, তখন বাতাস কমে যায়। কেন্দ্র অংশ অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়ের পেছনের অংশ আবার আঘাত করে প্রবল গতিতে। গত সারারাতে বাংলাদেশে এভাবে আঘাত করেছে ঘূর্ণিঝড়টি। সুতরাং আম্পানের প্রথম ও শেষ আঘাতে বাতাস বেশি ছিল, মাঝখানে বাতাস কম ছিল।
এদিকে সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যশোরে দুজন, পটুয়াখালীতে দুজন, ভোলায় দুজন, পিরোজপুরে একজন, সন্দ্বীপে একজন ও সাতক্ষীরায় একজন রয়েছেন।আম্পানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল। ইতোমধ্যে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলোর অর্ধশত পয়েন্ট ভেঙে গেছে। জনপদে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা।
অন্যদিকে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তছনছ হয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি রাজ্যটিতে আঘাত হানে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর। তখন এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮৫ কিলোমিটার।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।