‘আম্পান ’ ঝুঁকিপূর্ণ ১৪ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ২০শে মে ২০২০ ০২:২৫ অপরাহ্ন
‘আম্পান ’ ঝুঁকিপূর্ণ ১৪ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান ’ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসায় উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। বুধবার (২০ মে) দুপুর পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান ’ আজ বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এনডিআরসিসির দায়িত্বে থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী তাসমীন আরা আজমিরী বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৩ লাখ ৬৪ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এটি সকালের তথ্য। উপকূলীয় এলাকার প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন, একই সঙ্গে তারা সেই তথ্যটা আমাদের দিচ্ছেন।’তিনি বলেন,‘আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আসার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মোট সংখ্যাটি আমরা হিসাব করার পর আরও পরে জানাতে পারব।’

এনডিআরসিসিতে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মী জানান, দুপুর পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখ পার হয়ে গেছে।এর আগে সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসতেছে। ১০ লাখের বেশি লোক আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ আমাদের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। এ বছর স্কুল, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুালোকেও আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। এখন তো বাড়ির পাশেই স্কুল, বিকেল পর্যন্ত তো লোকজন আসতে থাকবেই। আমরা চাইছি ঝুঁকিপূর্ণ ২০ লাখের মতো মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে।’

তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার, পটুয়াখালীতে এসেছে ৩ লাখ ২৩ হাজার। খুলনা ও পটুয়াখালীর যে এলাকাগুলো বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই এলাকাগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বেশি লোক আসছে।’আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা আছে।’আশ্রয় কেন্দ্র ১২ হাজার ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ২১৫টি করা হয়েছে বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।

শাহ কামাল বলেন, ‘আম্ফান’ যদি সন্ধ্যার মধ্যে উপকূল অতিক্রম শুরু করে তবে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষ হয়তো কাল সকাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বুধবার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৩২) জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘’ উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

এটি বুধবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

ইনিউজ ৭১/ জি.হা