প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২০, ৩:৪৫
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চলতি মৌসুমে কৃষকের চাষকৃত গমের আশানুরুপ ফলন না হওয়ায় উৎপাদিত গম বাজারে বিক্রি করে কাটার খরচ তোলা সম্ভব নয় মনে করে ক্ষেতেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন গমচাষীরা।
গত কয়েকদিনে উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকার বেশ কিছু কৃষক তাদের পাকা গম এমন ভাবেই ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন।এছাড়াও উপজেলার জিগরী, যোগিপাড়া, মহজমপুর, ডাকরমারিয়া, জামনগর, মাধোববাড়িয়া, কালিকাপুর, রহিমানপুর ও দেবনগর গ্রামসহ বেশ কিছু গ্রামের কৃষকরা জমিতেই তাদের পাকা গম পুড়িয়ে দিচ্ছেন।
তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, ‘যেসব কৃষক মৌসুমের শেষে দিকে দেরিতে গম বীজ বপন করেছিলেন, শুধু তাদের গমেরই ফলনই কম হতে পারে। এছাড়া এবার উপজেলায় গমের ফলন ভালো হয়েছে।’
বাগাতিপাড়া উপজেলার বাজিতপুর গ্রমের আফাজ উদ্দিন, বিরাজ মোল্লা, কাঁকফো গ্রামের আবুল কালাম, কোয়ালিগাড়া গ্রামের সাদেক আলী নামের গমচাষীরা জানান, ‘মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জমি চাষ করে গম বীজ বপন করেছিলেন এই উপজেলার কৃষকরা। জমিতে নিয়মিত সার, সেচ ও পরিচর্যায় করে সবুজে গমে ছেয়ে গিয়েছিলো ফসলের মাঠ। কিন্তু গম যখন শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন কৃষকরা দেখতে পান গমের দানাগুলো প্রত্যাশিত আকারে হয়নি। এতে বিঘাপ্রতি গমের যে ফলন হয়েছে তা অর্ধেকেরও কম। বিঘা প্রতি গড় ফলন হয়েছে দেড় থেকে তিন মণ হারে। এই পরিমাণ গমের বাজার মূল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আর গম কেটে মাড়াইয়ের পর ঘরে তুলতেও খরচ লাগছে দুই হাজার টাকা। আর গমের বীজ বপন থেকে কাটার পূর্ব পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা আরো জানান,‘হঠাৎ গমের দানায় লক্ষ্য করা হয়, পুষ্ট অবস্থায় বেড়ে না উঠে দুইপাশ চেপে তা সরু হচ্ছে। বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর বিক্রি করে কাটার শ্রমিকের মজুরিই তোলা সম্ভব নয়, লাভ তো দূরের কথা। তাই পাকা গম না কেটে পুড়িয়ে ফেলতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।’
কথা হয় উপজেলার সাইলকোনা গ্রামের আলাউদ্দিন, সেলিম রেজা এবং ভাটুপাড়া গ্রামের ছাকাত আলী সঙ্গে তারা জানান, ‘জমির পাকা গম গাছ আগুনে পুড়িয়েছেন।’মাধোববাড়িয়া গ্রামের গমচাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম বীজ বপন করেছিলাম। বপন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গমের দানা না হওয়ায় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলেছি।'
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন,‘প্রতিটি ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে সেই সময়ের পরে চাষ করলে সেই ফসল হয়না। যেসব চাষীরা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়েও অনেক দেরিতে বীজ বপন করেছেন তাদের গমের ফলন ভালো হয়নি। এছাড়া চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে।’