প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২১
দীর্ঘ দুই বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে। ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ও মসজিদ—কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি এ হামলা থেকে। জাতিসংঘের প্রজেক্ট সার্ভিস অফিসের পরিচালক জোর্গে মোরেইরা দা সিলভা জানিয়েছেন, গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জোর্গে মোরেইরা দা সিলভা বলেন, গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ শেষ হলে প্রথম কাজ হবে ধ্বংসস্তূপ সরানো ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর গাজাকে পুনর্গঠন করা সহজ হবে না, এটি হবে এক দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত এই গাজায় এখনও লাখো মানুষ গৃহহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি, ওষুধসহ মৌলিক চাহিদার চরম অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
এরই মধ্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কিছুটা আশার খবর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম দফা কার্যকর করতে ইসরাইল ও হামাস রাজি হয়েছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “এই চুক্তির অর্থ হচ্ছে খুব শিগগিরই সব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল গাজা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি স্থায়ী শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।”
ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক মহল। তাঁর ভাষায়, এই শান্তি প্রক্রিয়া শক্তিশালী ও টেকসই হবে, যা ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী সমাধানের ভিত্তি স্থাপন করবে।
অন্যদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, “যদি সব পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়, তাহলে আজই যুদ্ধবিরতি সম্ভব।” তিনি জানান, বর্তমানে চারটি মূল বিষয়ে আলোচনা চলছে— ইসরাইলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহারের সীমারেখা, মানবিক সহায়তা এবং সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির শর্ত।
তিনি আরও বলেন, আলোচনার অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক এবং পক্ষগুলো এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। এই চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাড়বে এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার পথ তৈরি হবে।
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে যদি এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তবে গাজার ইতিহাসে এটি হতে পারে এক নতুন অধ্যায়। আন্তর্জাতিক মহল এখন সেই শান্তির আশাতেই তাকিয়ে আছে।