সরকারি সেবা প্রদানের প্রচলিত দৃশ্যপট বদলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের দোরগোড়ায় সস্তায়, সহজে, দ্রুত, স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত সেবা পৌঁছে দেয়াই ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন “একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)” প্রোগ্রাম দেশব্যাপী নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে বরিশালে। কেননা এখানে বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ব্যতীত অন্য কোন দফতরের ওয়েব সাইট হালনাগাদ নেই। বরিশালের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে নিয়োগ-বদলি ছাড়া অন্য কোনও তথ্য হালনাগাদ নেই। কোন কোন দফতরে আবার কর্মকর্তা বদলী কিংবা প্রমোশনজনিত কারণে অন্যত্র চলে গেলেও সে তথ্য আপডেট নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কোন কোন দফতরের অফিস প্রধান কোনদিন তার প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে ঢুকেও দেখেননি। কেউবা আবার তার দফতরের ওয়েব সাইট সম্পর্কে অবগতই নন বলে জানিয়েছেন। বরিশালের সরকারি দফতরগুলোর ওয়েব সাইট নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে আজ থাকছে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
সর্বদা দূর্যোগ –দূর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা। যাদের অসংখ্য অর্জন থাকলেও তথ্যের সহজলভ্যতা না থাকায় প্রচার প্রচারণা পাচ্ছে না বরিশালে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)’ প্রোগ্রামের আওতায় বরিশালে এ দফতরটির ওয়েব সাইটটি হালনাগাদ নেই। এমনকি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তাও নেই বরিশালে (!)। ওয়েব সাইটে যিনি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা রয়েছেন তিনি অনেক আগেই বরিশাল থেকে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এই ওয়েব সাইটটি সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কে ‘বার্নিং সিজন’ বলা হয়। এর মধ্যে আবার মার্চ-এপ্রিল মাসে বেশি আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে বিধায় এ সময়কে আলাদা গুরুত্ব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। চলতি মাসের প্রথম দু’দিনে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে কমপক্ষে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৬৩টি বসতঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দক্ষিণাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল বিগত বছরগুলোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বরিশালের ওয়েব সাইটে ঢুকলে ‘আমাদের সম্পর্কে’ একটি টুলস্ আছে। যেখানে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নামে একটি অপশন রয়েছে। তাতে ঢুকলে দেখা যায়, জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দূর্যোগ, দূর্ঘটনা ও অগ্নিকান্ডর পরিমান কমিয়ে আনা। রাজস্ব আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে আরো বেগবানকরণ। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে দূর্যোগ, দূর্ঘটনা ও অগ্নিকান্ড মোকাবেলা করা। আরো বেশি কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরীকরণ এবং অত্র বিভাগের কর্মীদের আরো উন্নত প্রশিক্ষন প্রদান বলে উলে¬খ করা হয়েছে। কিন্তু ওই ওয়েব সাইটে আমাদের সেবা নামক টুলস্ এ ঢুকলে চলমান প্রশিক্ষণের তালিকা, প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পরামর্শ, প্রশিক্ষণের বিস্তারিত এ ধরণের তিনটি অপশন থাকলেও যেখানে ঢুকলে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি। এমনকি বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মতিয়ার রহমান বদলী হওয়ার পর আরো দু’জন সহকারী পরিচালক যোগদান ও বদলী হয়েছেন এবং বর্তমানে একজন সহকারী পরিচালককে এখানে পদায়ন করা হয়েছে যার কোন তথ্য সেখানে নেই। এখনো সহকারী পরিচালক পদে মোঃ মতিয়ার রহমানকে দেখা যাচ্ছে। অথচ তার বর্তমান কর্মস্থল যশোরে।
এদিকে স্টেশন অফিসারসহ যারা সার্বক্ষণিক অগ্নিকাণ্ড রোধে কাজ করছেন তাদের কোন তথ্য নেই এই ওয়েব সাইটে। বরিশালে এ দফতরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ছিলেন আলাউদ্দিন। যিনি পদোন্নতি পেয়ে উপ-সহকারী পরিচালক পদে বর্তমানে মানিকগঞ্জে রয়েছেন। অপরদিকে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ ফারুক হোসেন সিকদার।
এ ব্যাপারে মোঃ ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, জনগণকে সচেতন করা এবং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমাদের মহড়া অব্যাহত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখান থেকে এ ওয়েব সাইটটি আপডেট করার কথা তা হয়নি। তবে শীঘ্রই আমাদের সহকারী পরিচালক মহোদয় এখানে যোগদান করার পর ওয়েব সাইটটি হালনাগাদ করা হবে বলেন এই কর্মকর্তা।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, প্রতি মাসের আইসিটি সভায় এগুলো বলা হয়। আমরা সব সময় সকল প্রতিষ্ঠানকে ওয়েব সাইট হালনাগাদ করতে বলা হচ্ছে। তাছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান যদি ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে সমস্যায় পড়ে তাহলে আমাদের দফতর থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়।
বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দফতর থেকে এগুলো মনিটরিং করা হলেও সব তথ্য আমাদের কাছে আসে না। এজন্য তিনি সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমরা সকল দফতরে প্রায় ৪৩ হাজার ওয়েব সাইট তৈরী করেছি। যা একটি অফিস থেকে মনিটরিং করার সম্ভব নয় উলেখ করে তিনি বলেন, স্ব স্ব দফতর প্রধান অফিস এগুলো মনিটরিং করবে। একজন সাধারণ মানুষের তথ্যের প্রয়োজন হয় উলেখ করে তিনি বলেন, কেবিনেট মিটিংয়ে তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দফতরকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। জনগণকে সেবা দেয়ার জন্যই আমাদের প্রচেষ্টা সেখানে যদি কেউ গাফিলতি করে তা দুঃখজনক বলেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগো যুগ্ম সচিব ড. মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন প্রতি মিনিটে প্রত্যেকটি অফিসের ওয়েব সাইট আপডেট করার কথা। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের “ভিশন ২০২১” ইশতেহার প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতের সম্মাজনক ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডাবি¬উএসআইএস) পুরস্কার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন উদ্যোগ ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটির চূড়ান্ত পর্যায়ের পুরস্কার পেল। অথচ এটুআই প্রকল্প বাস্তবায়নে বরিশালের সরকারি অফিসগুলোতে কর্মকর্তাদের অনীহা থাকায় এ প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না এ এলাকার মানুষ।