শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে গত বছরের তুলনায় বেড়েছে মশার ঘনত্ব। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু চিকনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর-বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাড়তি মশার উপদ্রবের তথ্য পাওয়া যায়।মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজধানীবাসী। তারা বলছেন, মশা নিধনে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটানো ছাড়া সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম তারা দেখছেন না। কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, গত বছরের মতো এবারও রাজধানীতে মশার উৎপাত থাকবে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু মশা নিধনে ধারাবাহিকভাবে কাজ না করলে এটি নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
দুই সিটি করপোরেশনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা করছেন তারা।পল্টন এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম গাজী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মশা বাড়ছে মনে হচ্ছে। আমি ছয়তালায় বাস করি, সেখানেও প্রচুর পরিমাণে মশা, যা আগে ছিল না। লিফটে ওঠানামা করার সময় দেখি লিফটের মধ্যে বড় বড় মশা। সামনে বর্ষাকালে মশা আরও বেড়ে যাবে আমার ধারণা।’ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৮ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় চা দোকানদার আব্বাস বলেন, ‘এখানে অনেক মশার উৎপাত। দিনের বেলা কোনরকম থাকা গেলেও বিকেলের পর থেকে মশার উৎপাতে বসে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশন থেকে মাঝে মধ্যে যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে মশা মরে না।’
এছাড়া ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ পুরান ঢাকার বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং পথচারী সন্ধ্যা নামতেই মশার উৎপাত বেড়ে যায় বলে জানান।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার মশা বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকাকে আমরা মোট ছয়টা ভাগে ভাগ করে মশার ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা জানুয়ারি মাসের এক তারিখ থেকে এ পর্যন্ত গবেষণায় ঢাকায় কিউলেক্স মশা এবং এডিস মশা দুটোই পেয়েছি। ঢাকায় এডিস মশার যে ঘনত্বের মাত্রা পেয়েছি, তা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, সে হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, গতবছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী ছিল, গত বছরের তুলনায় এবছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু গত বছরের তুলনায় এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি, তাই একজন গবেষক হিসেবে আমি ধারণা করছি, এ বছর যদি দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ মশা নিধন বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমরা মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এই ৬টি ওয়ার্ডে মশা নিধনে স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এছাড়া অন্যান্য ৭৫টি ওয়ার্ডে আমাদের রেগুলার রুটিন ওয়ার্ক করা হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।