টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের একবছর পূর্ণ হলো। এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরপরই মন্ত্রিসভায় একটি রদবদলের গুঞ্জন ছিল কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে মন্ত্রিসভার রদবদল পিছিয়ে গেছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফর থেকে দেশে ফেরার পরপরই যেকোন সময় মন্ত্রিসভার রদবদল হতে পারে। এই মন্ত্রিসভার রদবদলের জন্য যে সমস্ত প্রস্তুতি এবং পর্যালোচনা দরকার সেটাও প্রধানমন্ত্রী করেছেন বলেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রিসভার আকার বাড়বে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের কয়েকজনকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এছাড়া তরুণ এবং উদীয়মানদের অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে যারা আগামী দিনের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। কিন্তু মন্ত্রিসভা রদবদল নিয়ে সবচেয়ে বড় আলোচনা এবং গুঞ্জন যেটি সেটি হলো এই মন্ত্রিসভার রদবদলে কি দলের হেভিওয়েটরা স্থান পাবে?
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছে। সেই সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা গঠনে একটি চমক দেখান। তিনি দলের অধিকাংশ নেতা যেমন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদদের মতো হেভিয়েট নেতাদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সেই মন্ত্রিসভায় শুধুমাত্র বেগম মতিয়া চৌধুরী ছাড়া সিনিয়র কোন নেতৃবৃন্দ ছিলো না। কিন্তু সেই মন্ত্রিসভা দিয়েই ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে অবশ্য হেভিওয়েটদেরকে স্থান দেয়া হয় এবং তখন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রিসভায় স্থান পান। তৃতীয় মেয়াদে আবার দলের হেভিওয়েটদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হয় এবং এবার মতিয়া চৌধুরীর মতো ওয়ান ইলেভেনের সময় পরীক্ষিত নেতাদেরকেও মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে এসে তরুণ মন্ত্রীরা গতির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। যেন অনেক মন্ত্রীই ছন্দে নেই। একারণেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা আলোচনায় এসেছে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনায় মন্ত্রিসভায় রদবদলের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ১ বছরে মন্ত্রীদের কাজের যে পারফরমেন্স, সেই পারফরমেন্স রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে প্রধানমন্ত্রী সবই জানেন। কোন মন্ত্রী কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন এবং কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আর এই বিবেচনা থেকেই রদবদল হবে।
একটি সূত্র বলছে, যেহেতু আগামী ১৭ মার্চ থেকে মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে, সেইজন্য এই মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের আবারও মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। বিশেষ করে আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এরকম একটি গুঞ্জন রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই দুজনের পারফরমেন্স দলের হাইকমান্ডকে সন্তুষ্ট করেছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে বেগম মতিয়া চৌধুরীকেও অত্যন্ত সরব দেখা গেছে। মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে খুব ভালো পারফর্ম করছেন বলেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন। এই বিবেচনায় এই চার জন মন্ত্রিসভায় আসবেন কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
তবে একটি সূত্র বলছে এদের মধ্যে হয়তো দুই জনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্য একটি মহল মনে করছে যেহেতু শেখ হাসিনা একবার হেভিওয়েটদের বাদ দিয়েছেন কাজেই এই মেয়াদে আর হেভিওয়েটদের নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে দলের প্রবীন নেতারা আশা করছেন তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত রদবদলে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। কারণ তারা এরকম কিছুই ইঙ্গিত পেয়েছেন। আর তাদেরকে দলের কার্যক্রমে নতুন করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে সরকার যখন অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং মন্ত্রণালয়ের কাজের শ্লথগতি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন তখন মন্ত্রিসভায় হেভিওয়েটরা স্থান পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।