স্মরণকালের সেরা আয়োজনে বরিশাল মহানগর আ’ লীগের সম্মেলন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:১১ অপরাহ্ন
স্মরণকালের সেরা আয়োজনে বরিশাল মহানগর আ’ লীগের সম্মেলন কাল

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্মরণকালের সেরা আয়োজনে বিভাগীয় শহর দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

দীর্ঘ নয় বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে নতুন কমিটিতে চমক আসছে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সকালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনকে ঘিরে সমগ্র বরিশাল মহানগরীতে ব্যাপক সাজসজ্জা চলছে। বিমান বন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ সমগ্র নগরীতে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। 

এদিকে কে হবেন সভাপতি আর কে হবেন সম্পাদক এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে নানা গুঞ্জন। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে একটি সম্মেলনে জানান দিয়েছেন ব্যানার, ফেস্টুন আর জোড়ালো শ্লোগান দিয়ে নেতা নির্বাচন করা যাবে না। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, শুধু বাহ্যিক সাজসজ্জাই নয়, সম্মেলনের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন এবং সাংগঠনিকভাবে যোগ্য কমিটি উপহার দেবেনে তারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের প্রতিফলনও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের। অপরদিকে দলের দুঃসময়ের কান্ডারী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে আশাবাদি তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ ২০১২ সালে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন মহানগর সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। ২০১৫ সালে হিরনের অকাল মৃত্যুর প্রায় দু’বছর পরে সম্মেলন ছাড়াই মহানগর কমিটির পুনর্গঠন হয়। সে কমিটিতে হিরনের অনুসারী কারো তেমন পদ পদবি জোটেনি। সভাপতি পদে ফিরে আসেন অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। গত বছর সিটি নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি বরিশাল মহানগরীতে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। সে নিরিখে সাদিক আবদুল্লাহ আসন্ন এ সম্মেলনে প্রধান আলোচিত ব্যক্তি।

দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রায় ৯ বছর পরে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগে অনেক হিসেব চলছে। তবে ইতোপূর্বে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে সে বিষয়ে এখন আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে দলের আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে আর নতুন কিছু হবার সম্ভবনা নেই।

সম্মেলনকে ঘিরে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উচ্ছাস সৃষ্টি হয়েছে সভাপতি এবং সম্পাদক পদ নিয়ে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামতের প্রাধান্য থাকার বিষয়টি মাথায় রেখেও সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক সাদিক আবদল্লাহর প্রতি আগ্রহ রয়েছে তার অনুসারীদের। 
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে বাবা ও মায়ের সঙ্গে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের দেড় বছরের শিশু বরিশালের রাজনীতির বর্তমান ‘আইকন’ যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় উঠে আসা এক ‘উদীয়মান সূর্য’। যার আলোয় ‘আলোকিত’ বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গন। শুধু তাই নয়; বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার নেতৃত্বে বরিশালের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। নেতাকর্মীরা জানান, জাতীয় ও মহানগর সম্মেলন সামনে রেখে ৩০টি ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষ করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে নবীন-প্রবীণদের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। ফলে ৩০টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে দেখতে চান।

দলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা বলেন, নেতৃত্ব হচ্ছে সর্বজনবিদিত একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যা সমাজস্থ মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং নেতা হচ্ছে সমাজ পরিচালনার মূখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যার দ্বারা সমাজের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। সমাজ হয় পরিবর্তনশীল। আর পরিবর্তন কথাটির সাথে উন্নয়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনা এবং তার উন্নয়নকল্পে অবশ্যই যোগ্য নেতৃত্বর প্রয়োজন রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্বর বিকল্প নাই। আর দল বা গোষ্ঠী মাত্রই নেতার নেতৃত্ব। সমাজ উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপে যোগ্য তথা কার্যকরী নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ নির্ধারণে অবশ্যই তৃণমূলের চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে পদ বড় কথা নয়, দলকেই প্রাধান্য দিয়ে দলের সাথে থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে আরো সুদৃঢ় করা হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এই শীর্ষ নেতা।

একাধিক সূত্র জানায়, পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ও দলের আস্থা থাকায় আবারো সভাপতি পদে আসতে বর্তমান সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। দলীয় অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মীদের সাংগঠনিক উজ্জীবীত করতে পরিবতণ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে জেলা আ’লীগের সহসভাপতি বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীমের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে সভাপতি পদে যা-ই হোক সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগরপিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহতেই আস্থা রাখতে চান তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কেননা তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও ৩০ ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দক্ষতায় অভিভূত দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা। মহানগরের নেতারা মনে করেন, সাদিক আবদুল্লাহই পারবেন বরিশাল আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে।

বরিশালের স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও জাহিদ ফারুক শামীম এমপিকে সভাপতি করলে সংগঠন সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হবে বলে আলোচনা করেন। আর সাধারন সম্পাদক পদে জনপ্রিয়তায় থাকা সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে আসিন হলে দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তারা। এ দুজনকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয়া হলে বরিশালের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কমিটির আখ্যা পাবে বলেও অভিমত তাদের। তবে কে আসছেন নেতৃত্বে তা জানতে কাউন্সিল পর্যন্ত অপক্ষো করতে হবে নেতাকর্মীদের।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব