ওসির বিরুদ্ধে সাক্ষী, তিনজনকে পেটাল ইউপি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ১লা ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৮ অপরাহ্ন
ওসির বিরুদ্ধে সাক্ষী, তিনজনকে পেটাল ইউপি চেয়ারম্যান

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিমের কাছে পুলিশের ওসির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ায় তিন ব্যক্তিকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার ঘটনায় কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটনকে আটক করেছে দুদক। রাত ১১টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে তাকে আটক করা হয়। হামলার পরপরই অভিযুক্ত বেলাল নামের আরও এক যুবককে আটক করে পুলিশ। আটক ইউপি চেয়ারম্যানকে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হামলায় আহতরা হলেন- দেলোয়ার, রুহুল আমিন ও মফিজ আলম।

আহত রুহুল আমিন বলেন, কুতুবদিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌসসহ থানার নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে শ্রমিক লীগ নেতা মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল গত বছরের শেষের দিকে দুদকে একটি অভিযোগ করেন। শনিবার (৩০ নভেম্বর) এ অভিযোগ সরেজমিনে তদন্তে আসেন দুদক কর্মকর্তারা। জবানবন্দি নিতে দুদক কর্মকর্তারা আমাকেসহ অন্য সাক্ষীদের কুতুবদিয়া উপজেলা সদরে ডাকেন। সেখানে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। বড়খোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম শহিদুল উদ্দিন ছোটনের নেতৃত্বে ১০-১২জন সন্ত্রাসী আমাদের বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে।

অভিযোগ দায়েরকারী মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল বলেন, দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বিভিন্ন মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়, তবলার চরের বিতর্কিত জমি নিজে লাগিয়ত দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে থানা হাজতে আটকে রেখে টাকা আদায়ের বিষয়ে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আমি দুদকে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করি। বিষয়টি তারা আমলে নিয়ে তদন্ত না করায় আমি হাইকোর্টে একটি রিট করি। যার নং- ১২২৯১। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় দুদক কর্মকর্তারা শনিবার কুতুবদিয়া এসে সরেজমিন তদন্ত কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যায় দুদক টিমকে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে দেলোয়ার, রুহুল আমিন ও মফিজ আলম নামের তিন সাক্ষীর ওপর হামলা চালানো হয়।

মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল বলেন, ওসিকে নিজেদের অপকর্মে ব্যবহারকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, বড়খোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম শহিদ উদ্দিন ছোটন ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমগীর মাতবরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদের পিটিয়ে জখম করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলেও তাদের বাধা দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত অঞ্চল-২ এর উপ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিন বলেন, ওসি দিদারুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্তের দাবিতে মনোয়ার ইসলাম মুকুল নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে বিষয়টি তদন্তে শনিবার সকালে আমরা চার সদস্যের একটি টিম কুতুবদিয়ায় আসি। এ সময় আমরা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলি। অনেকে ওসির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এরই মাঝে সন্ধ্যার দিকে ওসির পক্ষ হয়ে চেয়ারম্যান ছোটনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত অভিযোগের সাক্ষ্য দেয়া তিনজনের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। খরব পেয়ে আমরা আহত তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাই। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে হামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কুতুবদিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস বলেন, দুদকের তদন্তকালে পুলিশের পক্ষ থেকে যা সহয়োগিতা চাওয়া হয়েছে, তাই দেয়া হয়েছে। সাক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনা আমাদের জানানো হলে তাদের উদ্ধারে সহযোগিতা করি। চেয়ারম্যান ছোটন আমার পক্ষ হয়ে সাক্ষীদের ওপর হামলা করেননি। তিনি কেন সাক্ষীদের ওপর হামলা করেছেন, তা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান ছোটনকে আটক করা হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব