তরুণীকে আটকে রেখে 'পালাক্রমে' ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৩১শে অক্টোবর ২০১৯ ১২:৪১ অপরাহ্ন
তরুণীকে আটকে রেখে 'পালাক্রমে' ধর্ষণ

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গীতে ৭ম শ্রেণির এক মাদরাসাছাত্রীকে (১৫) দুইদিন ধরে ঘরে আটকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করেছেন। গতকাল বুধবার চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে। আসামিরা হলেন- কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার হেসাখাল এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে মইন উদ্দিন (২০), টঙ্গীর গাজীবাড়ি এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে মাহিন আহাম্মেদ (২০), টঙ্গীর মাছিমপুর এলাকার জামাল ডাক্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল আউয়ালের ছেলে ওমর ফারুক (২২), একই বাড়ির মৃত আব্দুল হকের ছেলে মো. আলম (৩২) ও ধর্ষকদের সহায়তাকারী ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী হোসনা আক্তার (৩২)। পুলিশ ওমর ফারুক ছাড়া অপর চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

মামলার বরাত দিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, আসামি মইন উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসামি মইন উদ্দিনের প্ররোচনায় বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় মেয়েটি। ২৭ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে ওই ছাত্রীটি টঙ্গী মধুমিতা রোড এলাকায় গাড়ি থেকে নামে। এ সময় ওমর ফারুক ও মো. আলম মেয়েটিকে একা পেয়ে ফুঁসলিয়ে টঙ্গী মাছিমপুর এলাকার জামাল ডাক্তারের বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে মো. আলম ও ওমর ফারুক মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। দুইদিন ধরে মেয়েটির ওপর তারা পাশবিক নির্যাতন চালায়।

একপর্যায়ে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওমর ফারুক তাকে ২৮ অক্টোবর রাতে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তার পাশে রেখে পালিয়ে যায়। ওই ছাত্রী ঘুরতে ঘুরতে এক বয়স্ক নারীর কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মেয়েটি তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের কথা ওই নারীকে জানালে তিনি তাকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই অভিযান চালিয়ে চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়েটিকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বুধবার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, আসামিদের মধ্যে মো. আলম টঙ্গী এলাকায় হকার সমিতির সভাপতি এবং ওমর ফারুক বখাটে প্রকৃতির ছেলে। মইন উদ্দিন পূবাইল থানার মাঝুখান এলাকায় ইব্রাহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া। সে স্থানীয় একটি বেকারি কারখানায় কাজ করে। মাহিন আহাম্মেদ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র এবং হোসনা আক্তার তার অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মাছিমপুর এলাকায় সাবলেট ভাড়া থাকেন। ওই বাসাতেই ছাত্রীটিকে তার সহায়তায় ধর্ষণ করা হয়।

ওই ছাত্রীর মা জানান, তার স্বামী একজন সিএনজি চালক। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি কুমিল্লা লাঙ্গলকোট থানার হড়িপুর দক্ষিণ হাজীবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। তার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে রাতেই মোবাইল ফোনে প্রেমিক মইন উদ্দিনেকে টঙ্গীর মাছিমপুর এলাকায় ডেকে নেয় মো. আলম ও ওমর ফারুক। পরে মইনকে তারা মারধর করে। মইন উদ্দিন মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মো. আলম ও ওমর ফারুককে ৫ হাজার টাকা এনে দেয়। তারপরও তারা ছাড়েনি। বরং মইন উদ্দিনকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রী জানায়, সে তার প্রেমিক মইন উদ্দিনকে কোনদিনই দেখেনি। মোবাইল ফোনে তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। তার কথামতো সে টঙ্গীতে আসে। বাস থেকে নামার পর ওমর ফারুক ও মো. আলম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে আরও ৪-৫ জন লোক ছিল। আলম ও ফারুক তাদের সঙ্গে যেতে বলে। তখন সে প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে বলে জানায়। এ সময় ফারুক তাকে পানীয় জাতীয় কিছু খেতে দেয়। এরপর সে আর কিছুই বলতে পারেনি।

ইনিউজ ৭১/এম.আর