মিনহাজ তার বাবা-মা- বোনসহ নানীকে হত্যা করেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২রা আগস্ট ২০১৯ ১২:৪৩ অপরাহ্ন
মিনহাজ তার বাবা-মা- বোনসহ নানীকে হত্যা করেছেন

এমন পৈশাচিক এবং অমানবিক ঘটনা সহজে দেখা যায় না। নিজ সন্তান তার বাবা-মা- বোনসহ নানীকে হত্যা করতে পারে? কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কল্পনা বা চিন্তাও করতে পারে না। এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে কানাডায়। জানা গেছে, মা, বাবা, একমাত্র ছোটবোন এবং নানীকে হত্যার পর ‘ফারফেক্ট ওয়ার্ল্ড ভিডিও’ নামক এ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি গেমের মাধ্যমে বিষয়টি পোস্ট করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মিনহাজ জামান (২৩)। সেখানে নিহতদের ছবিও দেয়া হয়। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিবারের সকলকে হত্যার পর ইয়র্ক রিজিওনাল পুলিশ আসার সময়ে মিনহাজ বাসার বাইরে বের হয়ে ধরা দেন। কানাডার বৃহত্তর টরন্টোর মারখাম উপ-শহরে আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত মারখাম রোডের নিকটে ক্যাসেলমোর এভিনিউর বাসায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের শিকার মিনহাজের বাবা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মা মমতাজ মুক্তা জামান, ছোটবোন ম্যালিসা (২১) এবং নানী। 

গত ২৯ জুলাই সোমবার স্থানীয় সময় অপরাহ্ন ৩টায় কে বা কারা টরন্টো পুলিশকে ফোন করে এই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ডের তথ্য জানায়। নিহতরা সকলেই টাঙ্গাইল থেকে কয়েক দশক আগে কানাডায় এসেছিলেন। মিনহাজ হচ্ছেন মনির দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান। গত ২৯ জুলাই সোমবার তাকে টরন্টোর নিউমার্কেট আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির করা হয়। পরে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়ে যায় পুলিশ। আগামী ২ আগস্ট শুক্রবার মিনহাজকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র এ্যান্ডি প্যাটেনডেন জানান, ২৯ জুলাই বেলা ৩টায় তাদের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় মারখামের ক্যাসেলমোর এভিনিউর ঐ বাড়িতে কিছু মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চারটি লাশ দেখতে পায়। এদের কেউ তখন আর বেঁচে নেই। তবে কে, কোন জায়গা থেকে ৯১১-এ কল দিয়েছিল তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ।প্রতিবেশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে টরন্টোর গণমাধ্যম জানিয়েছে, মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ড্রপআউট। সে স্বল্পভাষী এবং সবসময় শান্তশিষ্ট হয়ে থাকতে ভালবাসতো। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। নিভৃতচারির মত নিকটস্থ মল এবং ব্যায়ামাগারে সময় কাটাতেন।

অনলাইনে স্ক্রিনশটে দেখা যায়, অভিযুক্ত মিনহাজ লিখেছে সে তার বাবা, মা, বোন এবং নানীকে হত্যা করেছে। সে গত এক বছর ধরে এ ধরনের পোস্ট দিয়ে আসছিল, তাই প্রথমে তার এ পোস্টটি কেউ বিশ্বাস করেনি। পোস্টে সে তার হতাশার কথাও লিখেছে। সে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হওয়ার পর সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং নাস্তিকতায় পেয়ে যায় তাকে। ঐ সময় থেকে সে এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করতে থাকে। মিনহাজ তার পোস্টে হত্যাকান্ডের একটি ছবি দিয়ে লিখেছে, ‘প্রথমে আম্মু, তারপর নানী, তারপর বোন এবং সবশেষে আব্বুকে হত্যা করি। সবশেষে সে লিখে ‘পুলিশ এসে গেছে, গুডবাই।’ধারণা করা হচ্ছে অপর প্রান্তে তার সাথে খেলতে থাকা বন্ধুটি পুলিশকে খবরটি জানায়। পরে পুলিশ বাড়ির সামনে থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে মিনহাজকে আটক করে। কীভাবে এই ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে তা ২৯ জুলাই সন্ধ্যা নাগাদ ইয়র্কের পুলিশ গণমাধ্যমকে জানাননি। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং লাশের ময়নাতদন্তের পরই বিস্তারিত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশের মুখপাত্র এ্যান্ডি প্যাটেনডেন। ইয়র্ক রিজিওনাল পুলিশের অপর কর্মকর্তা লোরা নিকোল জানান, ‘এই হত্যাকান্ডে আর কেউ জড়িত রয়েছে বলে অনুমিত হচ্ছে না। গ্রেফতারকৃত মিনহাজই এমন নৃশংসতা চালিয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন। এই নৃশংস হত্যাকান্ডে বাংলাদেশী কম্যুনিটি স্তব্ধ এবং শোকার্ত।উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে সান্তা ক্লারা সিটিতে হাসিব-বিন গোলাম রাব্বি (২২) নামক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণ গুলি করে তার বাবা গোলাম রাব্বি (৫৯) এবং মা শামিমা রাব্বি (৫৭)কে হত্যা করেন। রাব্বি দোষী সাব্যস্ত হবার পর জেল-জরিমানার অপেক্ষায় রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারে। রাব্বি দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন বগুড়া জেলা থেকে।