বছরে দুটো মাত্র ঈদ। সে দুটো ঈদও যদি হাসিখুশি আর আনন্দ- ফুর্তির মধ্যে উদযাপন কিংবা পালন করা না যায় তাহলে এরচেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে ? অন্তত ঈদে যদি ছেলেমেয়ের আবদার ঠিকমতো রক্ষা করা না যায় তবে সেটি যে কোনো বাবা-মায়ের জন্য সীমাহীন কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সামনে ঈদুল আজহা যদি মনের ইচ্ছে অনুযায়ী একটা কোরবানী আদায় করা না যায় তবে নিঃসন্দেহে তা যে কোনো মুসলমানের জন্য মর্মপীড়ার কারণ বটে। ঈদগুলো যদি পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উচ্ছাসে কাটানো না যায় তবে পুরো জীবনটাই মাটি। কিন্তু আমাদের জীবন এমনই। কি বা করার আমরা তো এমপিওভুক্ত কলেজের ননএমপিও শিক্ষক। এমন করেই বলছিল সৈয়দ বজলুল হক কলেজ’র অনার্স’র ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. রিয়াজ হোসেন।
বেসরকারী কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম’র তথ্য মতে, বরিশাল বিভাগের মোট ২৯ টি বেসরকারী কলেজ রয়েছে। এই সকল কলেজে ইন্টার ও ডিগ্রীর পাশাপাশি অনার্স এর বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। অনার্স’র বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয় এই সকল কলেজে। অনার্স’র বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের জন্য এ সকল কলেজে বর্তমানে ৩৫২ জন শিক্ষক রয়েছে। এই সকল শিক্ষকরাই ননএমপিও শিক্ষক।এরা কোন বেতন বোনাস পায় না। ভোলার নাজিউর রহমান ডিগ্রী কলেজ’র অনার্স হিসাব বিজ্ঞান শাখার প্রভাষক মাসুমা খালেদা মনি জানান, আমারা ননএমপিও শিক্ষক। আমাদের কোন বেতন বোনাস নেই।আমাদের বছরে একটা অনারিয়াম দেওয়া হয়।তাও পাওয়া যায় যদি কলেজের ইচ্ছা হয়। আমি নারী আমার প্রয়োজন আমার স্বামী পূরন করে।কিন্তু আমার সাথে যারা পুরুষ শিক্ষক আছে তাদের জীবন অনেক কঠিন। আমরাও ইন্টার ও ডিগ্রী শিক্ষকদের মতো নিবন্ধন পাশ করে সকল নিয়ম মেনে কলেজে চাকরি করছি। তবুও কেন তারা বেতন পাবে আর আমরা পাবো না।
বরগুনার পাথরঘাটা কলেজের অনাস’র্র সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিল্লাহ হোসেন বলেন, ঈদ আসতে না আসতে আমাদের টেনশন বহুগুণে বেড়ে যায়৷ এমনিতে সারা বছর নানা টেনশন তাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে থাকে। আমাদের এমনিতেই বেতন নেই। আমরা ননএমপিও শিক্ষক। ঈদে কোরবানী করা সব মুসলমানের ঐকান্তিক ইচ্ছে থাকে। আমাদের ও ইচ্ছা আছে। আমাদের বেতন এর জন্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিবে এই আশা করি। বেসরকারী কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও বরিশাল বাবুগজ্ঞ কলেজ’র অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মোকলেছুর রাহমান বলেন, বরিশাল জেলায় বর্তমানে ৯টি কলেজ’র অনার্স’র ননএমপিও ১৩৫ জন শিক্ষক কর্মরত। আমরা কেউ ই বেতন পাই না। আমার বাবুগজ্ঞ কলেজের শিক্ষক সংখ্যা ৫২ জন যাদের মধ্যে আমরা ১৪ জন ননএমপিও। এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা বেতন পায়। আমরা ১৪ জন ননএমপিও শিক্ষক বেতন পাই না। আমাদের ঈদ গুলো হয় দুঃখের। পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী কিছু করতে পারি না। আমাদের কোন বেতন নেই। আমাদের মাঝে অনেকেই টিউশনিসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবন যাপন করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বেতনের ব্যবস্থা করা হোক।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।