ছেলেধরা গুজবে নারীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২১শে জুলাই ২০১৯ ১০:২৫ অপরাহ্ন
ছেলেধরা গুজবে নারীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ

বাড্ডায় ছেলেধরা গুজব কেড়ে নিলো তাসলিমা বেগম রানু (৪০) নামে এক নারীর প্রাণ। উশৃঙ্খল কিছু যুবক পিটিয়ে হত্যা করলো তাকে। শনিবার সকালে এ ঘটনার পর এদিন রাতেই নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫শ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, ওই স্কুলে সন্তানদের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রানু। মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে বাড্ডা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাদী নাসির উদ্দিন এজাহারে বলেছেন, হঠাৎ অনেকেই তসলিমা বেগম রেনুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে গণপিটুনি দেয়া হলে তিনি নিহত হন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, পথচারীসহ স্থানীয় অনেকেই তাকে হত্যা করেছে।

ওসি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, বেকার সমস্যা এবং এক সন্তানকে নিজের থেকে দূরে রাখার কারণে তাসলিমা বেগম রানু হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এ কারণে তিনি হয়তো হাঁটতে হাঁটতে বাড্ডায় চলে এসেছেন, এসে ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাছাড়া যে স্কুলের কাছে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন ওই স্কুলে এ সময়ে ছাত্র ভর্তির কথা নয় বলে জানান ওসি।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দুপুরে তাসলিমার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে দাফনের জন্য স্বজনরা নিহতের লাশ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে নিয়ে গেছেন। নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বলেন, তাসলিমা বেগম রানু তার ৪ বছরের মেয়ে তাসনিম তুবাকে ভর্তি করাতে খোঁজ-খবর নিতে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এখনো তার সন্তানরা জানেন না ছেলেধরা গুজবে এই সমাজের মানুষরাই তাদের মমতাময়ী মাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

গণপিটুনির ভিডিওতে দেখা যায়, বাড্ডার অল্প কয়েকজন যুবকই মারছে তাকে। বাকিরা দেখছে, কেউ কেউ কাছ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছে। ৮-১০ মিনিট লাঠিপেটার পর আবার উপর্যুপরি লাথি দেয়া হয়। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় গণপিটুনির পর শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাসলিমা বেগম রেনুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। এ অবস্থায় তাসলিমা বেগম রেনুর পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করেছিলেন আড়ং, ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানে, পড়িয়েছিলেন স্কুলেও। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ঘরেই কাটাচ্ছিলেন অধিকাংশ সময়। উচ্চ শিক্ষিতা সংগ্রামী একজন নারীর ভাগ্যে এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছে না কেউ।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য গোটা সমাজকেই দায়ী করছে তাসলিমার পরিবার। সবকিছু ছাপিয়ে তাসলিমা বেগম রানুর আদরের দুই সন্তান তাহসিন আল মাহিদ ও তাসনিম তুবার ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত সবাই। জানা গেছে, যেখানে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু নিহত হয়েছেন, সেই স্কুলের পাশের এক বাড়িতে এক সময় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। গত দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। এরপর ছেলে তাহসিন আল মাহিদকে (১১) তার বাবা তসলিম হোসেন নিয়ে যায়। সে নোয়াখালীর চাটখিলে তার এক ফুফুর কাছে মানুষ হচ্ছে। তাসলিমা বেগম রানু মেয়ে তাসমিন তুবাকে (৪) নিয়ে মহাখালী ওয়ার্লেস গেটে জিপি জ-৩৩/৩ নং বাসায় ভাড়া থাকতেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব