যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। এই চক্রের প্রধান আলতাফ হোসেন (৫৮)। তিনি সবাইকে বলতেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার উড়োজাহাজ সংস্থাসহ বেশ কিছু বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলাচল করতেন প্রাডো, এলিয়নের মতো দামি গাড়িতে। আর যুক্তরাষ্ট্রে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আলতাফ ও তার চক্র। সম্প্রতি এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার চক্রে আরও অন্তত ১০ জন আছে এবং তাদের ধরতেও চলছে সন্ধান। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, আলতাফের টার্গেট ছিল ছাত্র, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত। দামি গাড়ি, কাপড় ও জুতা পরে টার্গেট ব্যক্তিদের সঙ্গে মিটিং করতেন পাঁচতারকা হোটেলে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া এবং চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার লোভনীয় ফাঁদ পেতে সর্বস্ব হাতিয়ে নিতেন। এসএসপি বলেন, আমেরিকায় নিজস্ব বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা, নিজের কথিত প্রতিষ্ঠান ‘ভেলা অ্যাসোসিয়েটসে’ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক আলতাফ গত কয়েক বছরে অসংখ্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারিত একজনের করা মামলায় গত বুধবার রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকা থেকে আলতাফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সহযোগী শরীফুল ইসলামসহ (৫৮)।
তিনি আরও জানান, দলনেতা আলতাফ হোসেনের চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত আনোয়ারা জাস্টিস বৃদ্ধাশ্রমের মালামাল সরবরাহের নামেও টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমেরিকায় নিজস্ব বেসরকারি বিমান সংস্থায় ভেলা অ্যাসোসিয়েটস নামের কোম্পানিতে নিয়োগ এবং মসজিদের ইমাম নিয়োগের কথা বলে ২০১৮ সালে অনেকের টাকাও আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। আমাদের জানামতে, এ পর্যন্ত ২০ জনেরও বেশি মানুষের প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন আলতাফ হোসেন। অবশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মো. শামীম বাশার নামে এক ব্যক্তি আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এসএসপি কামরুজ্জামান জানান, আলতাফ নিজেই কখনো দেশের বাইরে যায়নি; কাউকে বিদেশেও পাঠায়নি। আলতাফের অন্যতম সহযোগী শরীফুল মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকদের প্রলুব্ধ করে আলতাফের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিত। এরপর অবস্থা বুঝে দুই-চার লাখ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। আলতাফ ও শরীফুলের গ্রেফতারের খবর শুনে ইতোমধ্যে অন্তত ২০-৩০ জন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তাদের প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন বলে জানান এসএসপি। তিনি বলেন, এই চক্রের আরও অন্তত ১০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।