নিশি কণ্যাদের দিয়েই চলছে বরিশালের আবাসিক হোটেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: বুধবার ১৯শে জুন ২০১৯ ১০:১৪ পূর্বাহ্ন
নিশি কণ্যাদের দিয়েই চলছে বরিশালের আবাসিক হোটেল

পর্যটন নগরী না হলেও বরিশালে আবাসিক হোটেলের রমরমা ব্যবসা চলছে। আর বাহারি নামের হোটেলে বাহারী সব কাস্টমার ও নিশিকন্যাদের দ্বারা তাদের কাস্টমার ভেড়াতে নিশিযাপনের ব্যবস্থা করছে হোটেল মালিকগন। ফলে বোর্ডার না থাকলেও হোটেল ব্যবসাকে চাঙা রাখছে এই নিশি কন্যারা। অবশ্য মোটা অংকের অর্থের বিনিময় অনেক হোটেল মালিক প্রেমিক যুগল ও পরকীয়া প্রেমিকদের অনৈতিক কর্মকা-ের সুযোগ দিয়ে থাকে বলেও জানা যায়। আবার অনেককে হোটেলে উঠিয়ে সর্বশান্ত করারও খবর পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে বরিশাল নগরীর একাধিক আবাসিক হোটেলে এ ধরণের ঘটনা বিড়ল নয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অনৈতিক ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ হোটেল সংলগ্ন বাসিন্দাদের। 

মাদকের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় কোন কৌশলই কাজে আসছেনা। প্রতিদিনই বরিশালের কোন না কোন থানায় মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তেমনি আবাসিক হোটেলগুলোতেও একের পর এক অভিযানে কৌশল পাল্টিয়ে নিশি যাপনের ব্যবস্থা করছে বরিশালের আবাসিক হোটেল মালিকগণ। বর্তমানে ভিজিটিং কার্ডের নামে নিশি কন্যাদের তালিকা পৌছে দিচ্ছে খদ্দেরদের কাছে। পছন্দসই হলেই কেবল মুঠোফোনে কন্ট্রাক্ট করেন হোটেল বয়রা। খদ্দেরের চাহিদা মোতাবেক নিশি কন্যাদের পৌছে দেন খদ্দের নির্ধারিত স্থানে কিংবা হোটেলের রেজিষ্টারে স্বামী-স্ত্রী উল্লেখ করে দিন-রাত নিশি কন্যাদের রুমে ঢুকিয়ে দেন খদ্দেরকে। 

নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড ও নৌবন্দরে জেলা উপজেলা থেকে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে এই কার্ড বিতরণ করার জন্য বোরকা পরিহিত যুবতীদের কাজে লাগানো হয়। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলের এক শ্রেনীর পুরুষ দালালও বোরকা পড়ে মহিলা সেজে হোটেলের কার্ড বিতরণ করছে। এরা প্রকাশ্যে চলার পথে হাত বাড়িয়ে পথিকদের হাতে ধরিয়ে দেয় তাদের ভিজিটিং কার্ড। যে কোন প্রয়োজনে ফোন দেয়ার আহবান জানিয়ে মুহূর্তেই জনতার ভিড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর একটি হোটেলের এক যৌনকর্মী জানান, আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার ও বয়-বেয়ারা নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে খদ্দের যোগাড় করে দেয় তাদের। অনেক পেশাদার যৌনকর্মী অবশ্য নিজেরাই কার্ড বিলি করে। এসব কার্ডে সাধারণত মধ্যস্থতাকারীর মোবাইল নম্বর থাকে। তাদের আরেকটি কৌশল হারবাল চিকিৎসার নামে ভিজিটিং কার্ড বিতরণ। তাদের এ পেশার নেপথ্যে রয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র। তিনি আরো জানান, শুধু পেশাদার যৌনকর্মীরাই নয়, বর্তমানে কলেজ পড়–য়া এবং নামিদামী অনেক পরিবারের গৃহবধূরাও আসছে হোটেলে। তাদের কারো আছে অর্থ চাহিদা আবার কেউ আসেন মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের আশায়। 

একটি সূত্র জানায়, কেবল টাকার জন্য নয়, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্যও অনেক মহিলা এ কাজে নেমেছে। তবে এ সংখ্যা খুব কম। এমনও যৌনকর্মী আছে যাদের সন্তান বড়- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। আরেকটি সূত্র জানায়, হোটেলে শুধু পতিতা মেয়েরা আসে না। কেউ আসে পতিতা সেজে। খদ্দের দেখে পছন্দ হলে বাসায় নিয়ে যায়। বিনিময়ে হোটেল বয়দের কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়। তার মতে এরা পতিতা নয়। স্বামীর অসঙ্গতি, সংসারে ঝামেলা ও বিভিন্ন মানসিক কষ্টের কারণে এ কাজে তারা ঝুঁকে পড়েছে। জানতে চাওয়া হয়, এই ধরনের মহিলাদের সংখ্যা? সে বলে তার হাতে আছে ২৩ জন। প্রতিদিন পালাক্রমে তাদের খদ্দের পাঠাতে হয়। এরা ‘ভাবী’ নামে পরিচিত। এই ‘ভাবী’দের ভিজিট ঘণ্টা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তবে সুদর্শন পুরুষ তাদের বেশি পছন্দের। তাদের জন্য ডিসকাউন্ট আছে। এ সূত্রটির মাসিক আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। 

অপর একটি সূত্র জানায়, এক শ্রেনীর নিশিকন্যা রয়েছে যারা কিছু সময়ের শয্যাসঙ্গী হয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু অসৎ যৌনকর্মী ও ছদ্মবেশী ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। নগরীর আবাসিক হোটেল পাড়ায় গিয়ে এক নিশিকন্যার সঙ্গে কথা হয়। মধ্যবয়সী ছোটখাট গড়নের ওই তরুনীর দেহ ভেঙে পড়েছে। এক কথায় তার জীবনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘পেটের দায়ে দেহ বিলিয়ে দেয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছে। এখানে অনেক সময় পুলিশের পিটুনি খেতে হয়। হাড়গোড় পর্যন্ত ভেঙে দেয়। এছাড়া অনেক সময় খদ্দেরকে খুশি করার পর আবার হোটেলের কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও খুশি করতে হয়’। এর বেশি কিছু বলতে চাইলে তিনি হাত জোড় করে বলেন, ‘মাপ চাই, চলে যান। আমাকে কাজ করতে দেন। নিশিকন্যাদের যৌন বাণিজ্যের আড়ালে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও কম নয় বলে জানিয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা কিছু পুলিশ সদস্যও তাদের আয়ে ভাগ বসায় বলে জানান একাধিক নিশিকন্যা। 

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, এটা প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলন তৈরী করতে হবে। প্রশাসনকে আরো শক্ত ভুমিকা রাখতে হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের মূল ঘটনাগুলো সমাজের কাছে তুলে ধরতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে মুখ্য ভুমিকা পালন করতে হবে এগুলো প্রতিহত করার জন্য। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি, ডিবি) নাসিরউদ্দিন মল্লিক জানান, আবাসিক হোটেলগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় দিনই আমাদের বিভিন্ন শাখার সদস্যরা অনেককে আটক করেন। সামাজিকভাবে এদেরকে নিরুৎসাহিত করা গেলে এটা রোধ করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর