ইয়াবার আত্মসমর্পণকারীরা মামলা নিয়ে জেলে যাবেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৮ অপরাহ্ন
ইয়াবার আত্মসমর্পণকারীরা মামলা নিয়ে জেলে যাবেন!

নানা দেন দরবার উতরিয়ে বহুল প্রতিক্ষীত সময় আগামী শনিবার ইয়াবাবাজদের ইয়াবা ও অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণের পর তাদের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ায় মামলা দায়ের করে আদালতের আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষ সদয় হলে আত্মসমর্পণকৃত এসব আসামীরা হয়ত এক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে মামলা থেকে অপেক্ষাকৃত সহজে মুক্তি পেতে পারেন। তবে আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে পূর্বের দায়েরকৃত মামলাগুলো আদালতে আইনী প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে ও নিজস্ব গতিতে চলবে। শানিবার ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণের পর তাদের নিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া কি হবে এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশের বিশ্বস্থ একটি সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইয়াবাবাজরা আত্মসমর্পণের পর তাদের কৃত অপরাধ বিষয়ে আইনী প্রক্রিয়া কি হবে-তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতদিন কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে আসছিল। সুত্র জানিয়েছে-আত্মসমর্পণকারীদের অপরাধের বিষয়ে ইয়াবাবাজদের সাধারণ ক্ষমা করার কোন সুযোগ নেই। ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণের এটি প্রথম দাপ। ইয়াবা ও সকল প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে এপ্রক্রিয়া ও সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। সুত্র মতে-এ পর্যন্ত ৬৯ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবাবাজকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। এবার ৮৫ জন ইয়াবাবাজকে আত্মসমর্পণের জন্য টার্গেট করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৮ জন ইয়াবাবাজদের গডফাদার রয়েছে।

সুত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোট কতজন ইয়াবাবাজ আত্মসমর্পণ করেবেন-সে তালিকাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরী করা হবে। পুলিশ হেফাজতে থাকা ইয়াবাবাজদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যমতে, ২৫২ জনের আরো একটি নতুন তালিকা তৈরী করা হয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগে এই ২৫২ জনের রমরমা ইয়াবা বানিজ্যের কথা মোটেই জানতোনা। এদের মধ্যে আবার ১৪ জন হুন্ডী ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি বেশী। ২৫২ জনের নতুন তালিকার মধ্যে সাবরাং এ ৫৩ জন, টেকনাফ পৌরসভায় ২১ জন, শাহপরীরদ্বীপে ৭ জন, হৃীলায় ৭৪ জন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৭০ জন এবং অন্যান্য এলাকা ২৭ জন ইয়াবাবাজ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৮ জন শীর্ষ গডফাদার। এদের অধিকাংশই আগে থেকে দেশের বাইরে চলে গেছে। ফলে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে আটকানোর জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়েও কোন কুলকিনারা করতে পারেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তৈরীকৃত ইয়াবাবাজদের সর্বশেষ আপডেট তালিকায় ১১৫১ জনের নাম রয়েছে। আপডেট তালিকায় ২৫২ জন ইয়াবাবাজের নাম নেই। এদিকে, টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে শনিবার সকাল ১০ টায় ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করার জন্য স্টেইজ, প্যান্ডেল, নিরাপত্তাবেষ্টনী সহ আনুসাঙ্গিক সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষদিকে রয়েছে বলে টেকনাফ মডেল থানা সুত্রে জানা গেছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণস্থলে চলমান প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন। ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণ বিষয়ে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বলেছেন-শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ইয়াবা ও মাদক শতভাগ নির্মুল করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর দায়িত্বপালনের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে এব্যাপারে সামজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এদিকে, শনিবারের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান তদারকি করতে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম বৃহস্পতিবার কক্সবাজার এসেছেন। আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ করে বিমানযোগে কক্সবাজার আসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে কক্সবাজার আসছেন বলে জেলা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব