সরকার ঝড়ে পড়া রোধ করতে ২০১২সালে বিদ্যালয়হীন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করে ১৫শ বিদ্যালয়। তারই ধারাবাহিকতায় উখিয়ায় স্থাপিত হয় ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলেও বাকী ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানান সমস্যায় ভোগছে। যার ফলে এসব বিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে বেহাল অবস্থা। উক্ত বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে ইমামের ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও অরবিন্দু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দু শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী এবং মুছার হাজী গুরা মিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়রত রয়েছে।
অরবিন্দু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক আজাদ (চঃ দাঃ) অভিযোগ করে জানান, ২০১২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠান লাভ করে। ২০১৪ সালে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দু’বার পিএসপি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ কৃতকার্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ওই স্কুলে ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে আহমত কবির নামের একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলেও অন্য তিন জন শিক্ষক তদবীর করে বদলী হয়ে যায়। সম্প্রতি আহমদ কবির ডিপিএড প্রশিক্ষণে চলে যাওয়ার ফলে প্রধান শিক্ষককে ২ শতাধিক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে দাবী করে তিনি বলেন, সরকারি কোন প্রোগ্রাম বা শিক্ষা অফিসে আসতে হলে ওইদিন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। এহেন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের নানা অভিযোগ তাকে শুনতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ পালংখালী ইউনিয়নের মুছারখোলা হাজী গুরা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চঃ দাঃ) আশিষ কুমার বড়ুয়ার। তিনি বলেন বিদ্যালয় চলতি বছর থেকে চালু হলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে তিনি একাই চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল কাজে বিদ্যালয়ে যেতে না পারলে ওই দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে তিনি জানান। এই ২দি বিদ্যালয় চলছে ২জন শিক্ষক দিয়ে। যেটি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অত্যান্ত বৈষম্য।উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সহকারি শিক্ষকের পদ রয়েছে ৪৭১টি। তৎমধ্যে ৪২৪ জন শিক্ষক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করার পরও ৪৭টি পদ শূণ্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে ৮টি। এখনো পর্যন্ত এসব স্কুলে মান সম্মত ও চাহিদামত শিক্ষক নিয়োগ সহ আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়নি।
একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক সংকটের কারণে ছাত্রছাত্রীদের নীতিমালা অনুযায়ী পাঠদান করা দায়িত্বরত শিক্ষকদের পক্ষে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। যার ফলে শিক্ষকেরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এসএম কামাল উদ্দিন জানান, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে ৮০ শতাংশ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন কারণে অকারণে তারা কৃতকার্য হয়। এসব শিক্ষকদের উখিয়ার বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগ দেওয়া মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তারা স্ব স্ব এলাকায় বদলী হয়ে যেতে সক্ষম হয়। যে কারণে উখিয়ার শিক্ষক সংকট সমস্যা সমাধাণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, জেলা ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষায় স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তা না হলে শিক্ষক সংকট সমস্যা কখনো দূর করা সম্ভব হবে না। বুধবার উখিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে শিশু মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন সারা দেশে ৭২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পিএসসিতে পাস করেছে। অথচ তার জেলায় পাসের হার ৩২ শতাংশ। তিনি পড়ালেখার গুনগতমান বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্ববান হওয়ার নির্দেশ দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর বলেন, পিএসসিতে জেলার অন্য ৭ উপজেলার চাইতে উখিয়ায় পাসের হার ৮৫ শতাংশ। তিনি বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা সহ শিক্ষাঙ্গনের অন্যান্য সমস্যাধি সমাধান করা সম্ভব হলে এ উপজেলায় শতভাগ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম জানান, তিনি বিষয়টি আগে জানতে না। এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ওই স্কুল গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস্থ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।